'অখণ্ড ভারত'-এর দাবি তুলেছিলেন সঙ্ঘ প্রধান। এবার সেই দাবিতেই কার্যত সুর চড়ালেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। তাঁর দাবি, ফের ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ জুড়বে। এক্ষেত্রে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির একত্রিকরণের উদাহরণ তুলে ধরেছেন।
গুরগাঁয়ে বিজেপির দফতরে তিন দিনের জাতীয় প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী খট্টর দেশভাগকে 'দুঃখজনক' এবং 'বেদনাদায়ক' হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, 'দেশভাগ হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু' কংগ্রেসের কিছু লোকের হয়তো দ্রুত ক্ষমতা দখলের চেষ্টা ছিল। তাঁরা যদি কিছু ক্ষমতা ছেড়ে দিত, তাহলে হয়তো ৫, ১০ বা ২০ বছর পরে… দেশভাগ ঘটত না।'
পাশাপাসই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই… পূর্ব জার্মানি এবং পশ্চিম জার্মানি এক হতে পারলে, কেন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এক হতে পারে না? ঘটনাটা খুব বেশিদিন আগে ঘটেনি… ১৯৯০-৯১ সাল নাগাদ হবে। লোকেরা এসে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলেছিল। এই দুই দেশ কিন্তু ভিন্ন মতাদর্শের ছিল।'
এই অনুষ্ঠানে কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছেন মনোহরলাল খট্টর। কংগ্রেস 'ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি' করেছে বলে অভিযোগ তাঁর। এমনকী সংখ্যালঘু শব্দের মানেও হাত শিবির নিজেদের ভোটের রাজনীতির কারণে বদলে দিয়েছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'মতাদর্শগতভাবে, কংগ্রেসের একটাই লক্ষ্য ছিল… কীভাবে শাসন করা যায় এবং কীভাবে শাসন করার জন্য সমাজের বিভিন্ন অংশকে ভোট ব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এটা বিজেপির লক্ষ্য নয়। আমরাও যদি শুধু শাসনভার দখলকে মনে রাখি, তাহলে দেশ, মানুষ ও বিশ্বের জন্য কিছুই করতে পারব না। কংগ্রেসের নীতি, শুধু আমি, আমার বাড়ি, আমার পরিবার, আমার নাতি, আমার ভাই, আমার জাতি, আমার গ্রাম, আমার বাংলো। তারা এর বাইরে যেতেই পারে না)। অন্ধিকে বিজেপির লক্ষ্য ছিল 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস।'
খট্টর মতে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে 'সংখ্যালঘু' তকমা দেওয়া হয়েছিল যাতে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেশ বিভাজন হয়েছিল ধর্মীয় ভিত্তিতে। যাঁরা এই দেশে থাকতে চেয়েছিলেন তাঁরা বলেছিলেন, এই দেশ তাঁদের নিজেদের… তাদেরকে সংখ্যালঘু ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান এই শব্দটি ব্যবহার করেছে। কংগ্রেস এবং আমরাও তা গ্রহণ করেছি। এই তকমা কিভাবে এলো? ধারণা ছিল এইসব সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি বা ভয় থাকা উচিত নয়। নিরাপত্তাহীনতার কোনও অনুভূতি থাকা উচিত নয় এবং তাদের নিজস্ব একটি পরিচয় আছে। কিন্তু এখন সংখ্যালঘু শব্দের অন্য ব্যাখ্যা করে কংগ্রেস ভয় দেখাতে শুরু করেছে। এই ভয়ের পরিবেশ দূর করতে হবে। কংগ্রেসীরা সঙ্ঘের নামে ভয় দেখায়। বলে যে, সংখ্যালঘুদের সঙ্ঘ মেরে দেবে।'
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সংখ্যালঘু এবং সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির জন্য বিজেপি এবং সরকার নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে অতিবাহিত করা সময়ের উল্লেখ করেছেন মনোহরলাল খট্টর। বলেন, 'কিছু নেতা (বিদেশী বা বিরোধী দল) অস্থিতিরতা তৈরি করতে উস্কানি দিচ্ছেন। তাঁরা বলেছেন, যদি ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে আগুন জ্বলবে। কিন্তু কাশ্মীরে এখন ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে কারোর কোনও সমস্যা আছে?
বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা দ্বারা জারি করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অংশের একজন মহিলা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। এটা কেবল ভারতেই সম্ভব। যখন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দিল্লিতে শপথ নিচ্ছেন, তখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বিশৃঙ্খলা চলছে। একটি দেশের রাষ্ট্রপতি পালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে শান্তি নেই। আমরা শান্তি ও শৃঙ্খলা চাই।'