সীমান্ত সংঘাত নিয়ে চিনকে জবাব দিতে তাইওয়ানকে তুরুপের তাস করেছে ভারত। প্রবীণ কূটনীতিককে তাইপেতে বিশেষ দূত করে পাঠাচ্ছে দিল্লি। সানডে এক্লপ্রেস জানতে পেরেছে যে, বর্তমানে বিদেশমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (আমেরিকা বিষয়ক) গৌরাঙ্গলাল দাসকে তাইওয়ানে পরবর্তী বিশেষ দূত করে নিয়োগ করা হবে।
'এক চীন নীতি'-র কারণে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানে কোনও রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করতে পারে না। তবে, কূটনীতিত কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য তাইপেতে একটি সরকারি দফতর রয়েছে। এই দফতর ভারত-তাইপেই অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত। গোরাঙ্গলাল দাসকে এই অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টার জেনারেল পদে নিয়োগ করা হবে। এতদিন এই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন শ্রীধরণ মধুসূধণন।
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে নতুন রাষ্ট্রদূত হয়ে আসছেন তাইওয়ানের প্রবীণ কুটনীতিবিদ বাউশুয়ান গের। গত সাত বছর ধরে নয়াদিল্লিতে এই পদে যিনি ছিলেন, সেই তেন চুং কুয়াং উপবিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছেন। কুটনীতিবিদের একাংশের মতে, নয়া দূত নিযুক্ত করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে এক নয়া দিশা দিতে চাইছে তাইওয়ান। বাণিজ্য থেকে শুরু করে কৌশলগত সম্পর্ক আর মজবুত করার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি-তাইপেই।
উল্লেখ্য, ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সান ওয়েইডং শুক্রবারই বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন যে, 'আমাদের (ভারত-চিন) পারস্পরিক স্বার্থ এবং উদ্বেগকে সম্মান করতে হবে,এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলতে হবে।' বেজিংয়ের তরফে বলা হয়, তাইওয়ান, হংকং, দক্ষিণ চিন সাগর, তিব্বত ও জিংজিয়াং প্রদেশের বিষয়ে বিদেশি শক্তির অতি-সক্রিয় পদক্ষেপের বিষয়টি প্রকৃতিগতভাবে 'সংবেদনশীল'।
তবে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক নীবিড় করার ক্ষেত্রে অনেকটাই সাবধানী সাউথ ব্লক। কয়েকদিন আগেই তিব্বতী ধর্মগুরু দলাই লামার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাননি প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লাদাখে চলা সংঘাতের আবহে 'এক চিন নীতি'-তে আঘাত করতে চাইছে না কেন্দ্র। এই মুহূর্তে লাদাখ সংলগ্ন সীমান্তকে এপ্রিল মাসের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে দিল্লির প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু গোপনে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক পোক্ত করার কাজও চলছে সমানতালে।
২০১৪ সালে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে ভারতে তাইওয়ানের প্রতিনিধি চুং কুয়াং তিয়েনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একই সঙ্গে আমন্ত্রিত ছিলেন কেন্দ্রীয় তিব্বতী প্রশাসনের (তিব্বতী নির্বাসিত সরকার) প্রেসিডেন্ট লবসাং সাঙ্গে।
কয়েক সপ্তাহ আগেই বিজেপির দুই সংসদ সদস্য মীনাক্ষী লেখি এবং রাহুল কাসওয়ান (২০ মে) তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট টি ওয়েনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মোডের মাধ্যমে অংশ নিয়েছিলেন। তারপরই তাইওয়ানের রাষ্ট্রদূত হিসাবে ভারত গৌরাঙ্গলাল দাস নিয়োগ করছে। উল্লেখ্য শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ১৫ দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখাকে কেন্দ্র করে ভারত-চিন সেনা সংঘাত তীব্র হয়।
১৯৯৯ ব্যাজের আইএফএস গৌরাঙ্গলাল দাস ম্যান্ডারিন ভাষা ভালো বলতে পারেন। ২০০১-০৪ পর্যন্ত বেজিংয়ে ছিলেন। প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) পদে ২০০৬ সালে তিনি দেশে ফেরন, ২০০৯ পর্যন্ত সেই পদেই দায়িত্ব সামলেছেন। মনমোহন সিংয়ের আমলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (বিদেশ বিষয়ক) দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে মোদীর আমেরিকা সফরের সময় ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের কাউন্সিলর পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গেও উল্লেখযোগ্য আলোচনা চালান এই কূটনীতিক। ডোকালাম পরবর্তী সময় চিনা নীতি নিয়ে তাঁকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন