হুহু করে ছড়াচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। দেশজুড়ে নতুন করে মারণ ভাইরাসের উত্থান কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে জনস্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এদিকে দেশের দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার টপকে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারের তুলনায় হাজারখানেক বাড়ল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
শুক্রবার আপডেট করা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে ভারতে নতুন করে একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১১হাজার ১০৯ যা ২৩৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ, যেখানে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯,৬২২ । একদিনে করোনার বলি ২৯ জন। মৃতের সংখ্যা ৫,৩১,০৬৪-এ পৌঁছেছে। গতকাল এই সংখ্যাটা ছিল ১০ হাজারের সামান্য বেশি। একদিনে দৈনিক আক্রান্ত বেড়েছে ৯ শতাংশ। দৈনিক পজিটিভিটি রেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.০১ শতাংশের কাছাকাছি। পাশাপাশি সাপ্তাহিক পজিটিভিটি রেটও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.২৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৬২২। গত ২৪ ঘণ্টায় মারণ ভাইরাস প্রাণ কেড়েছে মোট ২৯ জনের। ফলে দেশের মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৪। বর্তমানে সুস্থতার হার ৯৮.৭০ শতাংশ। মহারাষ্ট্র এবং দিল্লির পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশেও বাড়-বাড়ন্ত অব্যাহত করোনার।
শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। এদিকে বাড়তে থাকা করোনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে WHO, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে করোনার এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে রয়েছে XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্ট। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) সোমবার দেশের জনগণকে ক্রমবর্ধমান কোভিড সংক্রমণের মধ্যে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছে যে তাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা উচিত। বৃহস্পতিবার দিল্লি স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন দিল্লি জুড়ে মোট ১৫২৭ জন নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
দেশে করোনা বাড়ছে। সেই কথা মাথায় রেখে করোনা-১৯ ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড উৎপাদন পুনরায় শুরু করল সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক আদর পুনাওয়ালা বুধবারএমনটাই জানিয়েছেন। পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁর কোম্পানির কাছে ইতিমধ্যে ৬০ লক্ষ কোভোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ আছে। বয়স্কদের অবশ্যই বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত। এর সঙ্গে পুনাওয়ালা আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবেই কোভিশিল্ড উৎপাদনও শুরু করে দিলাম। যাতে কারও প্রয়োজন হলে, তিনি নিতে পারেন।’
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে ওমিক্রন XBB.1.16 ভেরিয়েন্ট। ক্রমশ মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে আরও বেশি সংক্রামক করে তুলছে ওমিক্রনের এই ভেরিয়েন্ট। ভারতে এখনও পর্যন্ত নয়া এই ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা ১১৩। যার মধ্যে সিংহভাগই গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে রেকর্ড করা হয়েছে। গত ১৫ মাসে ভারতে ওমিক্রনের চারশো নতুন সাব-ভেরিয়েন্টকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে, সমস্ত ভেরিয়েন্টের ৯০ শতাংশ হল XBB৷ XBB.1.16।
XBB.1.16 ভেরিয়েন্টটি এখন পর্যন্ত ভারতে মোট কোভিড সংক্রমণের ৩৮.২ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ি। XBB.1.16-ভেরিয়েন্টে আক্রান্তের লক্ষণগুলি মোটামুটি একই। জ্বর, কাশি, সর্দি, সর্দি, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, কখনও কখনও পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ লক্ষিত হচ্ছে এই ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হলে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা বাড়িতেই সুস্থ হয়ে ওঠেন তবে কারুর যদি অন্য কোন শারীরিক সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে রোগীকে অনেকসময় হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। দেশে আবার মাথা চাড়া দিচ্ছে করোনা সংক্রমণ। তবে এবারে নয়া রূপে। সংক্রমণের হার বাড়ছে তরতরিয়ে। কারণটা আর কিছুই না। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই নয়া স্ট্রেন সহজেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, এই স্ট্রেনটি ওমিক্রনের দুটি রিকম্বিন্যান্ট স্ট্রেনের সংমিশ্রন। এটি হাইব্রিড প্রজাতির ভাইরাস। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে গতকালের আজ অনেকটাই বেড়েছে সংক্রমণ। এদিকে বাড়তে থাকা সংক্রমণের মাঝে শনিবার কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীনা জর্জ গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক এবং অনান্য রোগে আক্রান্তদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে। তিনি রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের পর এই নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, কোভিডে মৃতের মধ্যে বেশিরভাগই ৬০ উর্ধ্ব। তাই তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার দরকার।