২৩ বছরের ভারতীয় ছাত্রী জাহ্নবী কান্ডুলার মৃত্যুর ঘটনায় যে মার্কিন পুলিশ অফিসার হাসিঠাট্টা করেছিলেন, আপত্তিকর কথা বলেছিলেন সিয়াটেলের সেই পুলিশ অফিসারকে প্রমাণের অভাবে তাকে এই মামলায় বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করে মার্কিন আদালত। বুধবার, প্রসিকিউটর বিভাগ এক নির্দেশে জানিয়েছে প্রমাণের অভাবে সিয়াটল পুলিশ অফিসার কেভিন ডেভের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
ওয়াশিংটন নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ছাত্রী জাহ্নবী গত বছর ২৩ জানুয়ারি রাস্তা পেরোতে গিয়ে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান। কেভিন ডেভ নামে একজন পুলিশ অফিসার এই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। ঘটনার সময় জাহ্নবীকে ধাক্কা দেওয়া পুলিশের গাড়িটি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল। দুর্ঘটনার তীব্রতা এতটাই মারাত্মক ছিল যে জাহ্নবী প্রায় ১০০ ফুট দূরে উড়ে গিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
প্রসিকিউটর বিভাগ বলেছে, যে কেভিন ডেভের বিরুদ্ধে গাফিলতির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরে, মার্কিন পুলিশ 'বডিক্যাম ফুটেজ' প্রকাশ করেছে, যেখানে সিয়াটল পুলিশ অফিসারকে দুর্ঘটনার ঘটনায় হাসতে শোনা গেছে। এরপরই ছাত্রীর মৃত্যুতে অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠে।
সিয়াটল পুলিশ একটি মেমো জারি করে জানিয়েছে, “কিং কাউন্টি প্রসিকিউশন অফিসের উল্লেখ করা অফিসার কেভিন ডেভ, যিনি রাস্তায় ১১৯ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ডেভ তার ইমার্জেন্সি লাইট জ্বালিয়ে রেখেছিল। অন্যান্য পথচারীরা তার সাইরেন শুনতে পেলেও কান্ডুলা তার গাড়িটিকে ছুটে আসতে দেখেও রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিল। মেমোতে আরও বলা হয়েছে কান্ডুলা সম্ভবত ওয়্যারলেস ইয়ারবাড পরে ছিলেন যার কারণে তিনি সাইরেনের শব্দ শুনতে পান নি। এই ঘটনা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয় যে ডেভ ইচ্ছাকৃতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’
এদিকে এই ঘটনার ২ দিন পরে, সিয়াটেলের ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল ভারতীয় তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায় সেই বিষয়ে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। একদিন আগে, কান্দুলার পরিবার, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছিল, "প্রথমে তারা মৃত্যুর ঘটনায় রসিকতা করেছিল, এখন ঘটনায় দোষী অফিসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের জন্য কোনও ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা নেই'!
এক্স-এ (আগের টুইটার) ভারতীয় তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ভারতীয় কনস্যুলেট বলেছে, "জাহ্নবী কান্দুলার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। কনস্যুলেটের তরফে তরুণীর পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জাহ্নবী এবং তার পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কনস্যুলেট সম্ভাব্য সন ধরণের সহায়তা করবে"।
পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে "আমরা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে যথাযথ প্রতিকারের জন্য সিয়াটেল পুলিশ সহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করেছি। বিষয়টি এখন পর্যালোচনার জন্য সিয়াটল সিটি অ্যাটর্নির অফিসে পাঠানো হয়েছে। আমরা সিয়াটেল পুলিশের প্রশাসনিক তদন্ত শেষের জন্য অপেক্ষা করছি মামলার অগ্রগতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাব।" জাহ্নবী ২০১৯ সালে তার B.Com শেষ করে ২ বছরের কোর্স সম্পন্ন করার জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান।