Advertisment

মূর্তিচোর সুভাষ কাপুর! যার পাচার করা ঐতিহাসিক নিদর্শন শোভা পাচ্ছে বিদেশের মিউজিয়ামে

কাশ্মীরে জঙ্গিদের ধ্বংস করা মন্দিরের নিদর্শনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিয়েছে এই স্মাগলার। তার পাচার করা সামগ্রী দেখে নিজেদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াচ্ছেন পুরাতত্ত্ববিদরাও। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তমূলক রিপোর্টে উঠে এসেছে সেই সব কাহিনি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Smuggler Subhas Kapoor

পাচারকারী সুভাষ কাপুর (বাঁ দিকে)

খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় এবং প্রথম শতাব্দীতে তৈরি হাতির দাঁতের চন্দ্রদেবতার ভাস্কর্য, প্রেমের ঈশ্বর কামদেবের অষ্টম শতাব্দীর পাথরের ভাস্কর্য, ১৭৬০ সালে মহিষাসুরমর্দিনীর জলরঙের চিত্র, ১৭৭৫-৮০ সালের রাম-লক্ষ্মণের ছবি। এই সবই রয়েছে নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট (মেট)-এ। মিউজিয়ামের ক্যাটালগ খুলতেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই সবগুলোর ক্ষেত্রে কমন ব্যাপার হল, বর্তমানে ভারতে প্রশাসনের হেফাজতে থাকা ৭৩ বছরের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ।

Advertisment

এই নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) এবং ইউকে-ভিত্তিক ফাইন্যান্স আনকভারড-এর সঙ্গে যৌথভাবে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি তদন্ত চালায়। আর, সেই তদন্তে দেখা গিয়েছে, এই সব মূর্তি চুরির সঙ্গে নাম জড়িয়ে রয়েছে ৭৩ বছরের কুখ্যাত মূর্তিচোর বা স্মাগলার সুভাষ কাপুরের নাম। গত বছরই এই ভাবে ভারত থেকে লাগাতার মূর্তিচুরির জন্য তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। বর্তমানে তিরুচিরাপল্লির সেন্ট্রাল জেলে সেই কারাদণ্ড ভোগ করছে এই মূর্তিচোর।

এই কুখ্যাত মূর্তিচোর গ্রেফতার হওয়ার পর দেখা গিয়েছে, গোটা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে এই মূর্তিচোরের নেটওয়ার্ক। আমেরিকার তদন্ত সংস্থার গোয়েন্দারা বাজেয়াপ্ত হওয়া মূর্তির ভিত্তিতে অনুমান করছেন, সুভাষ কাপুর এখনও পর্যন্ত ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে ২,৬০০-র বেশি মূর্তি পাচার করেছে। একইসঙ্গে গোয়েন্দারা মনে করছেন, সংখ্যাটা অনেক বেশি হতে পারে। যেটা বলা হচ্ছে, সেটা ন্যূনতম।

এই মূর্তিচোরের চক্র আমেরিকার পাশাপাশি ছড়িয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও। আমেরিকার মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্ট বা সবচেয়ে বড় মিউজিয়াম এই সুভাষ কাপুরের থেকে বেশ কিছু মূর্তি কিনেছিল। আমেরিকার এই মিউজিয়ামে কাশ্মীর গ্যালারি রয়েছে। কাশ্মীরে জঙ্গিরা বেশ কিছু মন্দির ভেঙেছে। ওই সব মন্দিরের মূর্তি উধাও হয়ে গিয়েছিল।

গত কয়েক বছরে ঝিলম নদী থেকে বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু, এখনও কাশ্মীরের বেশ কিছু মন্দিরের মূর্তির খোঁজ এখনও মিলছে না। যার বিরুদ্ধে বহু জায়গাতেই এফআইআরও দায়ের হয়েছে। কিছু এফআইআর আবার তদন্তে কিছুই পাওয়া না-যাওয়ায় 'ক্লোজ' বা বন্ধও হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে একটি মূর্তি ছিল মহিষাসুরমর্দিনীর। সেই মূর্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কয়েক বছর আগে জার্মানির মিউজিয়াম থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। ওই মূর্তি শ্রীনগরের এসপিএস মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন- নাগপুরে জি২০ বৈঠক! হীরক রাজার দেশের মতই রাস্তায় ভিখারি-ভবঘুরেদের খেদাচ্ছে পুলিশ

ভারতের কাশ্মীরের বেশ কিছু মূর্তি মার্কিন মিউজিয়াম সুভাষ কাপুরের থেকে কিনেছিল। যার মধ্যে রয়েছে আখনুরের টেরাকোটার তৈরি মাথা, হারওয়ানের এক বিশেষ টাইলস, যা কাশ্মীরের কেবলমাত্র ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলেই পাওয়া যায়। যা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকরাও। তাঁরা মনে করছেন, এই সব পুরাতাত্ত্বিক জিনিসপত্র এতদিন তাঁদের তৈরি তালিকায় ছিল না। অর্থাৎ, তাঁর ওই সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ব্যাপারে ওয়াকিবহালই ছিলেন না।

আর, এই সব কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন সংগঠন দাবি করছে, কাশ্মীরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উধাও হয়ে যাওয়ার যে সব এফআইআর ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে, তা নতুন করে চালু করতে হবে। পাশাপাশি, ওই সব সংগঠনগুলো দাবি করছে ১৯৭২-এ তৈরি দেশীয় আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন ভারতের পক্ষে রয়েছে। সেই সব আইনের ভিত্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

USA history Museum
Advertisment