/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/02/mirage-20001.jpg)
গতকালই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক হয় সে দেশের বিমানবাহিনীর প্রধানের
পুলওয়ামা-কাণ্ডের বারো দিনের মাথায় আকাশপথে প্রত্যাঘাত করল ভারত। বিদেশমন্ত্রকের সচিব বিজয় গোখলে জানিয়েছেন, "ভারত 'অসামরিক এবং সতর্কতামূলক' পদক্ষেপে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে জৈশ-এ-মহম্মদের একটি প্রধান জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়েছে।"
নয়া দিল্লিতে ভিড়ে ঠাসা এক সাংবাদিক সম্মেলনে গোখলে বলেন, "আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর ছিল জৈশ-এর জঙ্গিরা ভারতে ফের আত্মঘাতী সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসন্ন বিপদের মুখে তাই জৈশ-এর বৃহত্তম ঘাঁটির উপর এই আগাম সতর্কতামূলক অভিযান চালানো জরুরি হয়ে পড়েছিল।"
আরও পড়ুন: ১৯৭১ এর পর এই প্রথম পাকিস্তানের আকাশে ভারতীয় বায়ুসেনা
বালাকোট অভিযান: এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে
গোখলে আরও জানিয়েছেন, ভোররাতের তাদের ঘাঁটিতে এই হামলায় জৈশ-এর বহুসংখ্যক জঙ্গি, প্রশিক্ষক এবং সিনিয়র কমান্ডার নিহত হয়েছে। এই জঙ্গি ঘাঁটিটি চালাতো জৈশ প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজাদ। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ চলত ভবিষ্যতের আত্মঘাতী জেহাদি বা 'ফিদায়ীন ধর্মযোদ্ধাদের'।
নিহতদের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায় নি এখনও
আজকের আক্রমণকে 'অসামরিক এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ' হিসেবে বর্ণনা করে গোখলে বলেছেন বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটি বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ, অসামরিক লোকালয়ের থেকে এর দূরত্ব। তাঁর কথায়, "কয়েক ঘন্টা আগেই যেহেতু হামলা চালানো হয়েছে, আমরা এখনও বিস্তারিত বিবরণের অপেক্ষায় রয়েছি।"
কী ধরনের বিমান এবং অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা নিশ্চিত করা হয় নি
বালাকোট অভিযান: এখন পর্যন্ত যা জানা যায় নি
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে সূত্রের খবর অনুযায়ী, জৈশ-এর এই ঘাঁটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখা জেলার গভীরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক স্রেফ এটুকুই জানিয়েছে, যে এই ঘাঁটি ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটি টিলার ওপর অবস্থিত, লোকালয় থেকে বহুদূরে।
স্রেফ একটি ঘাঁটির ওপর হানার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে
'অসামরিক এবং সতর্কতামূলক' পদক্ষেপের কথা বললেও একথা বিদেশ মন্ত্রকের স্পষ্ট করে বলে নি, যে এটি আদৌ বায়ুসেনা না সেনাবাহিনীর অভিযান। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, ১২ টি মিরাজ যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ১,০০০ কিলোর বোমাবর্ষণ করে। কিন্তু গোখলে এই বিষয়ে বিশদে কিছু বলেন নি।
আকাশপথে এই হামলার তাৎপর্য কী?
১৯৭১-র ভারত-পাক যুদ্ধের পর পাকিস্তানের আকাশপথে ঢুকে পড়ে এটাই ভারতের প্রথম হানা। ১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে আকাশপথে হানা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে বার ভারত নিজেদের আকাশসীমায় থেকে মিরাজ ২০০০ ব্যবহার করেছিল কার্গিল পাহাড়ে পাকিস্তানের পোস্টগুলির উপর লেসার-নির্দেশিত বোমা নিক্ষেপে।
বিদেশ মন্ত্রক আজকের হানায় বহুসংখ্যক সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করলেও, হতাহতের কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয় নি।
বালাকোট হামলা: পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে ভারত, এবং পাকিস্তানের অধিকার রয়েছে জবাব দেওয়ার। "প্রথম কথা, ওরা আজকের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়েছে। আমার মতে, নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করা হয়েছে, এবং আত্মরক্ষার্থে যোগ্য জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে পাকিস্তানের," বিদেশ দফতরে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে এক "আপৎকালীন বৈঠকের" পর সাংবাদিকদের বলেন কুরেশি। বৈঠকের সারমর্ম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জানান তিনি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তথা তাদের জনসংযোগ বিভাগ ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস-এর মুখ্য আধিকারিক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর আবার দাবি করেছেন, ভারতীয় যুদ্ধবিমান “মুজফ্ফরবাদ সেক্টর থেকে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ” করে, বালাকোটে "বোমা ফেলে" এবং "দ্রুত ও কার্যকরী প্রত্যুত্তর পায় পাক বিমানবাহিনীর থেকে। কেউ হতাহত হন নি বা ক্ষতি হয় নি," একটি টুইটে জানান গফুর। "ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে। পাকিস্তান বায়ুসেনা সত্বর তৈরি হয়ে যায়। ভারতীয় বিমান ফিরে গেছে।"