দক্ষিণ কাশ্মীরে সেনার গুলিতে জম্মুর রাজৌরির তিন শ্রমিকের নিহত হওয়ার ঘটনার দেড় বছর পরে সেনাবাহিনীর এক অফিসারের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল প্রক্রিয়া শুরু হল। সেনাবাহিনীর ৬২ নং রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ক্যাপ্টেন ভূপেন্দ্র সিংয়ের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেড় বছর আগে দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে একটি ভুয়ো এনকাউন্টার হয়। সেই এনকাউন্টারে তিন জঙ্গির মৃত্যু হয় বলে দাবি করা হয়েছিল।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, “কোর্ট অফ এনকোয়ারি এবং সাক্ষ্যের তথ্যের উপর ভিত্তি করে গোটা প্রক্রিয়াটি এগোচ্ছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে একজন ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে ২০২০-এর জুলাইয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানের আমশিপুরার এনকাউন্টারের জেরে কোর্ট-মার্শাল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে”। ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ''ভারতীয় সেনা নৈতিকভাবেই গোটা বিষয়টি পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এক্ষেত্রে আরও তথ্য পরে জানানো হবে। আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনও পক্ষপাত না হয় তা দেখা হবে।''
উল্লেখ্য, পুলিশের চার্জশিটেই প্রথম ভুয়ো এনকাউন্টারের তত্ত্ব সামনে আসে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ভূপেন্দ্র সিং ওরফে মেজর বশির খানকে অপহরণ এবং রাজৌরির তিন বাসিন্দাকে খুনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০-এর ১৮ জুলাই জম্মুর রাজৌরির তিন শ্রমিক - ইমতিয়াজ আহমেদ (২০), মোহম্মদ আবরার (১৬) এবং আবরার আহমেদ (২৫)-কে শোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে একটি ভুয়ো এনকাউন্টারে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে উত্তর কাশ্মীরের একটি কবরস্থানে তাদের সমাধিস্থ করা হয়।
আরও পড়ুন- বিবেক অগ্নিহোত্রীর সঙ্গে বৈঠক, নবরাত্রিতে পণ্ডিতদের কাশ্মীরে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি ভাগবতের
ওই বছরেরই ১০ অগাস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় নিহত তিন শ্রমিকের দেহের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা উপত্যকায়। নিহতদের পরিবরের সদস্যরা পুলিশে মিসিং ডায়েরি করেন। কাজের জন্য বেরিয়ে তিন যুবক ১৭ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় বলে দাবি করেছিলেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাড়ির ছেলেদের ছবি দেখে আঁতকে উঠেছিল পরিবার। যাদেরকে জঙ্গি বলে দাবি করা হচ্ছিল আদতে তাঁরা ছিলেন নেহাতই শ্রমিক। কাজের খোঁজে বেরিয়েই চরম পরিণতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁদের। বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীও।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে ২০২০-এর ১৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীও জানায় আমশিপোরা গ্রামে এনকাউন্টারে নিহত তিন ব্যক্তি আসলে রাজৌরির শ্রমিক। ডিএনএ পরীক্ষাতেও তাঁদের পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় সেনাবাহিনী। পরে অভ্যন্তরীণ তদন্তে এই ভুয়ো এনকাউন্টারের জন্য ক্যাপ্টেন সিংকেই দোষী বলে চিহ্নিত করা হয়।
Read story in English