প্যাংগংয়ের ফিঙ্গার পয়েন্ট থেকে লাল ফৌজ সরানো নিয়ে ভারত-চিন সেনা কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনা এগিয়েছে। তবে, কৌশলগত কারণে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দেপসাং নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি। দেপসাংয়ে নজরদারিতে ভারতীয় বাহিনীকে এখনও চিনা সেনারা বাধা দিচ্ছে। দেপসাং নিয়ে ভারতীয় সেনার এই নীরবতা ঘিরে বাহিনীর একাংশই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। এই এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে আরও ১৮ কিমি পশ্চিমে চিনা সেনা তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে মরিয়া। তাই দেপসাং প্রসঙ্গে বেশি দিন নীরবতা বজায় রাখলে এই অঞ্চলে চলতি পরিস্থিতিকেই নতুন করে স্থিতাবস্থা বলে ধরে নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্তা ডি এস হুডার মতে, 'প্যাংগংয়ের থেকে কৌশলগতভাবে দেপসাং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই অঞ্চল ছাড়া দৌলত বেগ ওল্ডি ও কারাকোরামে যেতে অসুবিধা হবে। একান থেকে জারবুক সায়রও মাত্র ৬ কমিমি দূরে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অবস্থানগত বদল ভারতের পক্ষে তাই খুভই অসুবিধাজনক।' তাঁর মতে, 'নিয়ন্ত্রণরেখাকে আরও পশ্চিমে বিস্তৃত করে পশ্চিমাঞ্চলের সড়কে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে চিনা বাহিনী। জিংজিয়াং প্রদেশ ও তিব্বতে নজরদারি তীব্র করতেই তাদের এই প্রয়াস।'
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সিনিয়ার অফিসার জানিয়েছেন যে, কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনায় দেপসাং নিয়ে কোনও আলোচনা ভারতের তরফে উত্থাপন করা হয়নি। নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে ভারত-চিন বিরোধের অন্যান্য অংশের মতো এই অঞ্চলে দুই দেশের সেনা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেই। তাই আপাতত বিরোধের চারটি এলাকা থেকে সেনা সরানো নিয়েই আলোচনা চলছে। অফিসারের কথায়, প্রকৃত নিয়ন্ত্ররেখা থেকে সেনা সরানোর সার্বিক আলোচনার সময় সম্ভবত দেপসাংয়ের কথা উত্থাপন করা হতে পারে।
নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশের মতে, কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও ভারত ইচ্ছা করেই আলোচনায় দেপসাংয়ের প্রসঙ্গ তোলেনি। ভারত চাইছে প্যাংগং থেকে আগে লাল ফৌজ সরে যাক। ভারতীয় সেনা মনে করছে, আপাতত দেপসাং নিয়ে নীরব থাকলে বিরোধের পয়েন্টগুলি থেকে চিনা সেনারা সরে যাবে ও এপ্রিলের পরিস্থিতি ফিরে আসবে।
দেপসাং-প্যাংগম নিয়ে আগে থেকেই ভারত-চিন বিরোধ ছিল। তবুও এই দুই অঞ্চলে নজরদারি চালাত দুই দেশের সেনা। তবে বর্তমানে নতুন করে সংঘাতের শুরু থেকেই এইসব এলাকায় ভারতীয় সেনাকে নজরদারিতে বাধা দিচ্ছে লাল ফৌজ। কিন্তু, দেশবাসীর বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে প্যাংগং। পর্যটন স্থল হিসাবে জনপ্রিয় হওয়ার কারণেই এই অঞ্চলে চিনা সেনার অনুপ্রবেশের বিষয়টি দেশবাসীর বেশি নজরে পড়েছে।
এক গোয়েন্দা আধিকারিকের মতে, গত কয়েক মাসে নয়, বহু বছর ধরেই দেপসাং নিয়ে ভারত-চিন বিরোধ রয়েছে। তাঁর দাবি, ২০১৭ থেকেই সেখানে ভারতীয় সেনা এওই অঞ্চলে নজরদারি চালাতে পারেন না। তবে ভারতীয় সেনার তরফে সেনা অফিসার এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। দেপসাংয়ে ভারতীয় সেনা নিয়মিত তার টহল সীমা পর্যন্ত নজরদারি চালায় বলে জানিয়েছেন সেনা অফিসার।
Read full in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন