জঙ্গি ধরতে সেনাবাহিনীতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেশি কুকুরকে? এমনই একটি সংবাদ সম্প্রতি সামনে এসেছে। কিন্তু কেন এই ভাবনা? সূত্রের খবর ভারতীয় সেনা জার্মান শেফার্ড, ল্যাব্রাডর, বেলজিন ম্যালিনোইস ও গ্রেট স্যুইশ মাউন্টেন ডগের প্রতি তাদের এতদিনকার মোহ কাটিয়ে একটি ভারতীয় দেশি কুকুর নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। তার পিছনেও রয়েছে বেশ কিছু কারণ।
প্রথমত বিদেশি কুকুরদের থেকে দেশি কুকুরদের পিছনে খরচ একদিকে যেমন কম লাগবে তেমনই সব ধরণের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একেবারে ওস্তাদ দেশি কুকুর। ফলে জঙ্গিদের খুঁজে বার করতে অথবা বিস্ফোরক উদ্ধারে দেশি কুকুরের জুড়ি মেলা ভার। এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে কাজ করতে জার্মান শেফার্ড বা ল্যাব্রাডরের ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে, দেশি কুকুর ৪০ সেকেণ্ডের কম সময়েই তা করে ফেলতে ফেলতে সক্ষম। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ বাহিনীতেও জায়গা পেয়েছে দেশি কুকুর। এমনকী রাজ্য পুলিশকে চাকরিও পাকা করেছে আশা নামের এক দেশি কুকুর। বিদেশি কুকুরদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রশিক্ষণেও সিদ্ধহস্ত দেশি কুকুর, এমনটাই জানিয়েছেন প্রাণি বিশেষজ্ঞ তথা ট্রেনাররাও।
তাদের যুক্তি দেশি কুকুরদের শিকার ধরার প্রবণতা বিদেশি কুকুরদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা বিশেষ বাহিনী SPG-তে জায়গা করে নিয়েছে দেশি জাতের মুধল হাউন্ড কুকুর। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার পথে এককদম এগোতেই কি দেশি কুকুরকে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে পারদর্শী করতে ডগ-স্কোয়াডে জুড়ে নিতে চাইছে সেনাবাহিনী? দেশি কুকুরকে ট্রেনিং দিলে তারা বিদেশি কুকুরদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে? তা জানতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন প্রখ্যাত প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও ট্রেনার ডাক্তার কুণাল চক্রবর্তী ও ডাক্তার সুব্রত রায়ের সঙ্গে।
দীর্ঘ একদশকের বেশি সময় ধরে পথকুকুরদের সেবায় এক অগ্রণী নাম ডাক্তার কুণাল চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, ‘দেশি কুকুরদের যদি ছোট থেকে ঠিক পদ্ধতিতে ট্রেনিং দেওয়া যায় তাহলে তারা বিদেশি কুকুরকে অনায়াসেই টেক্কা দিতে সক্ষম। যেটা প্রধান বিষয় আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে একবারে ফিট দেশি কুকুর। বুদ্ধি বা শিকার ধরতেও তারা রীতিমত ওস্তাদ। চাই শুধু উপযুক্ত ট্রেনিং’।
ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ড পুলিশ রাস্তার কুকুরদের স্নিফার ডগের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। উত্তরাখণ্ড পুলিশের তরফে বেশ কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। কুণাল বাবুর কথায়, ‘সেনাবাহিনী বা পুলিশ ফোর্সে দেশি কুকুরদের কাজে লাগানোর আরও একটা সুবিধা আছে। সমাজে দেশি কুকুরদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। মানুষ দেশি কুকুরদের দত্তক নিতে আরও বেশি উৎসাহিত হবে”।
অন্যদিকে বিশিষ্ট প্রাণী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুব্রত রায় বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে দেশি কুকুরকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশি কুকুরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দেশি কুকুররা যে কোনও অংশে কম নয় তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। উপযুক্ত ট্রেনিং ও অল্প খরচায় দেশি কুকুররাও জঙ্গি ধরতে বিশেষ ভাবে পারদর্শী’।