Indian freedom and women: ১৯৩০-এর দশকে, সারা দেশে, বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলায়, নারীদের নেতৃত্বে বিপ্লবী দলগুলো গড়ে ওঠে। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কলকাতা ছিল এই মহিলা-নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপের অংশ। মহিলারাই মহিলাদেরকে অস্ত্র, যুদ্ধ এবং সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপে প্রশিক্ষিত করত। নারীর অধিকার, স্বাধীনতা এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি সম্পর্কিত বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করত।
ভারতীয় উপমহাদেশে নারী আন্দোলনের একটি আকর্ষণীয় গতিপথ রয়েছে। কবে তা শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে পণ্ডিতদের ভিন্নমত রয়েছে। এই আন্দোলনগুলোর উত্স ১৯ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হয়। যেখানে উপমহাদেশে সামাজিক সংস্কার এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বন্ধন থেকে নারীদের মুক্তির দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছিল। ১৯ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে পুরুষ সমাজ সংস্কারকরা পশ্চিমী উদার মূল্যবোধে প্রভাবিত হয়েছিলেন। যা তাঁদের সতীদাহ, বিধবা পোড়ানো, কন্যাশিশু হত্যা, নারীদের বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে সরব করে তুলেছিল। নারীদের স্বার্থে সংঘটিত বিধবা বিবাহের মত প্রথম দিকের কিছু সামাজিক সংস্কারের পথ প্রশস্ত করেছিল।
এই সংস্কারগুলো মহিলাদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁদের আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনে প্রভাব ফেলেছিল। পুরুষদের সঙ্গে তাঁরাও এগিয়ে এসেছিলেন সামাজিক উন্নয়নের শরিক হতে। ১৯ শতকের শেষের দিকে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে শুরু হয়। ভারতে নারী আন্দোলনের ইতিহাস, বিভিন্ন কারণে অনন্য। তার একটি হল- ব্রিটিশকে শাসন থেকে উৎখাতের পাশাপাশি, নারীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও সরব হয়ে উঠেছিলেন নারীরা। যা সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইনি ও রাজনৈতিক সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনকে প্রভাবিত করেছিল।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দেখিয়েছিল যে নারী কেবল নিষ্ক্রিয় কর্মী নয়। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও মাতাঙ্গানি হাজরার মতো অনেক বিপ্লবী যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পথে নেমেছিলেন। বীনা দাস এবং লাবণ্যপ্রভা ঘোষের মতো নারীরা জাতির স্বার্থে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু, শতাব্দীর দখলদারিত্ব ও নিপীড়ন আর দারিদ্র, এই নারীদের প্রতি আমজনতার স্মৃতিতে আঘাত করেছে।
আরও পড়ুন- মোদীর বাজিমাত! ইএফটিএ-র সঙ্গে চুক্তি, ভারতে গড়গড়িয়ে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা
লাবণ্যপ্রভা ঘোষ
পুরুলিয়া জেলা কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে, মহাত্মা গান্ধীর শুরু করা অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য লাবণ্যপ্রভা ঘোষের বাবাকে ১৯২১ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৯২৬ সালে, তিনি মানভূম (বর্তমান পুরুলিয়া) জেলা থেকে জেলা কংগ্রেস কমিটির প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালের মার্চে লবণ সত্যাগ্রহ শুরু হলে লাবণ্যপ্রভা স্থানীয়ভাবে মিছিল সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৪৫ সালে পুরুলিয়ার কোনাপাড়ায় হওয়া পতাকা সত্যাগ্রহ।
মাতঙ্গিনী হাজরা
১৮৬৯ সালে তমলুকের কাছে হোগলা নামে এক গ্রামে মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম হয়। তিনি একজন দরিদ্র কৃষকের কন্যা ছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা পাননি। ১২ বছর বয়সে তাঁকে মেদিনীপুরের আলিনান গ্রামের ৬০ বছর বয়সি ত্রিলোচন হাজরার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। ১৮ বছর বয়সে মাতঙ্গিনী বিধবা হয়েছিলেন। কোনও সন্তান ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। যে কারণে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল, 'গান্ধী বুড়ি'। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার পরও মাতঙ্গিনীকে দমানো যায়নি।
সুহাসিনী গাঙ্গুলি
সুহাসিনী গাঙ্গুলি ১৯০৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, খুলনায় জন্মেছিলেন। বিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবে জড়িয়ে পড়েছিলেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সঙ্গে তিনিও সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন। কলকাতায় এসে তিনি ছাত্রীদের নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন। বহু পড়ুয়াকে তিনি ছাত্রী সংঘে যুক্ত করেছিলেন।
সরলা দেবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নি সরলা দেবী পরিচিত ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানী নামে। তিনি শুধুমাত্র ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার জন্য নয়, নারীর অধিকারের জন্যও লড়াই করেছিলেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভালো ছাত্রী ছিলেন। ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রী থাকাকালীন তাঁর ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব আরও বেড়ে যায়। লীলা নাগের সঙ্গে মিলে তিনি ঢাকায় দীপালি সংঘের কাজকর্মে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই সংগঠন মহিলাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিত।