এখন থেকে দেশের দশটি কেন্দ্রীয় সংস্থা দেশের মধ্যে অবস্থিত যে কোনো কম্পিউটারের ওপর নজরদারি করতে পারবে। বৃহস্পতিবার এই মর্মে একটি নির্দেশ জারি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গৌবা। এই নির্দেশে বলা হয়েছে, ওই দশটি কেন্দ্রীয় সংস্থা "যে কোনো কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রেরিত বা প্রাপ্ত তথ্য, অথবা সেই কম্পিউটারে সেভ করে রাখা যে কোনো ধরনের তথ্যের নাগাল পেতে পারে"।
আমি জানতে পেরেছি যে গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ১০টি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ছাড়পত্র দিয়েছে যাতে তারা যে কোনও কম্পিউটারে উৎপন্ন প্রেরিত, প্রাপ্ত বা সংরক্ষিত তথ্য পাঠোদ্ধার, আটক ও নজরদারি করতে পারে ১/২
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 21, 2018
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস, ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি, ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েট (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং), ডিরেক্টরেট অফ সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স (শুধুমাত্র জম্মু কাশ্মীর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং আসামের সার্ভিস এলাকার জন্য), এবং দিল্লির পুলিশ কমিশনারের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ এরা সবাই দেশের যে কোনো কম্পিউটারের ওপর নজর রাখতে পারবে।
আরো পড়ুন: ফের হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রযুক্তি মন্ত্রক
প্রত্যাশিতভাবেই এই নির্দেশের বিরুদ্ধে উত্তাল বিরোধী শিবির। আজ, শুক্রবার সমস্ত বিরোধী দল এই নির্দেশকে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক এবং মৌলিক অধিকারের ওপর আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও একাধিক বিরোধী নেতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, নরেন্দ্র মোদী সরকার ভারতকে একটি নজরদারি রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
From Modi Sarkar to Stalker Sarkar, clearly the string of losses has left the BJP govt. desperate for information. https://t.co/1Q004d66bu
— Congress (@INCIndia) December 21, 2018
একটি টুইটার পোস্টে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস বলেছে, সরকার "তথ্য সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে"। সাম্প্রতিক দেশের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে কংগ্রেসে তাদের টুইটে বলেছে, "স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে একের পর এক রাজ্যে হারের ফলে বিজেপি সরকার তথ্য সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে"।
কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন এই নির্দেশের ফলে ভারতকে নজরদারি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। "এটি মৌলিক অধিকার ও গোপনীয়তার অধিকারের ওপর চূড়ান্ত হামলা। এই নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ওপরেও হস্তক্ষেপ করে, কারণ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, গোপনীয়তা একটি মৌলিক অধিকার। সরকার গায়ের জোরে এই নির্দেশ কায়েম করেছে, এবং আমরা দলমত নির্বিশেষে এর বিরোধিতা করছি," দিল্লিতে বিভিন্ন বিরোধী নেতাকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন শর্মা।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, সরকার খোলাখুলিভাবে গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করছে। "মোদী সরকার খোলাখুলিভাবে গোপনীয়তা রক্ষার মৌলিক অধিকারকে খর্ব করছে। নির্বাচনে হেরে এখন সরকার চাইছে আপনার কম্পিউটারের ওপর নজরদারি করতে।"
Why is every Indian being treated like a criminal? This order by a govt wanting to snoop on every citizen is unconstitutional and in breach of the telephone tapping guidelines, the Privacy Judgement and the Aadhaar judgement. https://t.co/vJXs6aycP0
— Sitaram Yechury (@SitaramYechury) December 21, 2018
সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর টুইটে প্রশ্ন তোলেন, "প্রতিটি ভারতবাসীকে অপরাধী হিসেবে দেখা হচ্ছে কেন? সরকারের এই নজরদারির নির্দেশ অসাংবিধানিক এবং টেলিফোন ট্যাপিং নিয়মাবলী, গোপনীয়তা সংক্রান্ত রায় এবং আধার কার্ড সংক্রান্ত রায়ের বিপক্ষে।"
নির্দেশ অনুযায়ী, যে কোনো গ্রাহক বা পরিষেবা প্রদানকারী বা সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারের ভারপ্রাপ্ত যে কোনো ব্যক্তি উপরোক্ত প্রত্যেকটি এজেন্সির সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা করতে বাধ্য। এর অন্যথা হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই নির্দেশ জারি করেছে ২০০০ সালের তথ্য প্রযুক্তি অ্যাক্টের ৬৯ (১) ধারার আওতায়, যার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনো সংস্থাকে এই ধরনের নির্দেশ দিতে পারে, যদি তা "রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অথবা সংহতির স্বার্থে, বা ভারতের সুরক্ষার কারণে, পড়শী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে, প্রকাশ্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে, অথবা এই সমস্ত বিষয়ে যে কোনো অপরাধ সংঘটিত করার প্ররোচনা রুখতে, বা কোনো অপরাধের তদন্তে" জরুরি বলে মনে করে সরকার।
বর্তমান নির্দেশিকাটি কম্পিউটার সংক্রান্ত হলেও এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থাকে ফোন ট্যাপ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর। এই নির্দেশ শেষবার আপডেট করা হয় ২০১১ সালে, যার জেরে একাধিক এজেন্সি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের বা টেলিফোন কলের বিশদ বিবরণ তলব করতে পারে।