এলগার পরিষদ কাণ্ডে 'মাওবাদী যোগ' থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে দেশের পাঁচজন মানবাধিকার কর্মীকে। 'ইউ এ পি এ ১৯৬৭' অধীনে এদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছে রাষ্ট্র। 'আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট' নতুন করে ২০১২ সালে সংশোধিত হওয়ার পর থেকেই আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাস দমনের আইন ক্রমেই কড়া হচ্ছে ভারতীয় গণতন্ত্রে। একবার চোখ বুলনো যাক সে সব আইনে।
টাডা- TERRORIST AND DISRUPTIVE ACTIVITIES PREVENTION ACT,1987/ TADA
টেররিস্ট অ্যান্ড ডিসরাপ্টিভ অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট ১৯৮৭ বা TADA র আওতায় একসময় সব ধরণের সন্ত্রাসবাদী মামলাকে ফেলা হতো। ঘন ঘন অপব্যবহারের ফলে ১৯৯৫-এর পর আর কার্যকর থাকে না এই আইন। 'টেররিস্ট' এবং 'ডিজরাপ্টিভ' শব্দ দুটি থাকার জন্য জামিন পেতে সমস্যা হতো। এই আইনে শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজনকে আটকে রাখা এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব ছিল।
পোটা- PREVENTION OF TERRORISM ACT, 2002/ POTA
১৯৯৯ -এর আইসি ৮১৪ হাইজ্যাক এবং ২০০১-এর সাংসদে হামলা, এই দুই ঘটনায় নতুন করে আরও কড়া সন্ত্রাসদমনকারী আইনের প্রয়োজন দেখা দিল রাষ্ট্রের। তৈরি হল নতুন আইন POTA। এই আইন দ্বারা একজন সন্দেহভাজনকে সর্বোচ্চ ১৮০ দিন আটক করে রাখার নির্দেশ দিতে পারে বিশেষ আদালত। নতুন আইন আসার পর সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ চালানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করাও 'সন্ত্রাস' হিসেবে গণ্য। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নিয়েও অনেক বাড়তি শর্ত যোগ করা হল এই আইনে। এই আইনের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা অনুসারে নতুন কোনও সংগঠনকে এই তালিকাভুক্ত অথবা তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজটিও সোজা হয়ে গেল। এক্ষেত্রেও অপব্যবহারের অভিযোগ ক্রমশ বাড়তে থাকায় ২০০৪ সালে বাতিল করা হয় এই আইন।
ইউএপিএ- UNLAWFUL ACTIVITIES PREVENTION ACT, 1967/ UAPA
POTA বাতিল হওয়ার পর সন্ত্রাস দমনে নতুন আইনের প্রয়োজন ছিল স্বাভাবিক ভাবেই। মূলত আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে বলবত হল UAPA। এই আইন অনুসারে সন্ত্রাসমূলক কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য হওয়া, সেরকম সংগঠনকে সমর্থন করা এবং সেই সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, সবই 'অপরাধ' হিসেবে নথিভুক্ত হয়। সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রে চার্জ শিট তৈরি করতেও বেশি সময় দেওয়া হল রাষ্ট্রের হাতে। ৬ মাস সময়। মুম্বই হামলার পর ২০০৮ এ একবার সংশোধিত হয় এই আইন। ২০১২ তে আরেকবার। সংশোধিত আইন স্বভাবতই 'অপরাধী'র বিপক্ষে। নোট জাল, অস্ত্র রাখা এবং দেশের আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, এমন যে কোনও ঘটনাকেই 'সন্ত্রাসবাদী' কার্যকলাপের তকমা দেওয়া যায়।