প্রবল উৎকণ্ঠায় ইউক্রেনে থাকা হাজার-হাজার ভারতীয় পড়ুয়া। কিয়েভ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রায় চারশো ছাত্র বৃহস্পতিবার থেকে হোস্টেলে আতঙ্কের প্রহর গুণছেন। বাইরে অনবরত বেজে চলেছে বিপদ সংকেতবাহী সাইরেন। সেই সাইরেন থামার অপেক্ষায় পড়ুয়ারা। গোলাগুলি এড়িয়ে আপাতত নিরাপদ বাঙ্কারগুলিতে পৌঁছনোর চেষ্টায় ছাত্রছাত্পরীরা।
ইউক্রেনে পাঠরত মেডিক্যাল পড়ুয়া ফাহাদ রহমান। ভারতীয় এই যুবক বলেন, ''আশেপাশের অ্যাপার্টমেন্টে থাকা সমস্ত পড়ুয়ারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে চলে এসেছেন। গতরাতে আমরা কেউ ঘুমাইনি। কারণ, রিপোর্ট ছিল রাশিয়ান বাহিনী কিয়েভকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। আমরা সবাই প্রায় জেগে রয়েছি। সাইরেন বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।''
কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা ফাহাদ আরও বলেন, ''এখনও পর্যন্ত (ইউক্রেনের সময় সকাল ৯.৩০) কিয়েভে আমাদের এই এলাকাটিকে সুরক্ষিত বলেই মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত এই অঞ্চলে কারফিউ ছিল। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আমরা একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। তবে এরপরেও এখনও গণপরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। কিয়েভের সামরিক বিমানঘাঁটিতে হামলার পর বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আক্রমণ চলে।''
তবে কিয়েভের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেও ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফাহাদ। তাঁর কথায়, ''বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত পড়ুয়ার জন্যই হোস্টেল খুলে দিয়েছে। আমরা রাতে জেগেছিলাম, আশা ছিল সাইরেন বন্ধ হয়ে যাবে। মাঝরাতের পরে ইউক্রেনের ট্যাঙ্ক এবং বাহিনী বাইরের রাস্তা ধরে চলে যায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু গুজব রটে। রাশিয়ানরা শুক্রবার ভোরে শহরে আক্রমণ করবে বলে গুজব রটেছিল। তাই আমরা হোস্টেলে রয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা নিরাপদ। আমাদের কাছে দিন দুয়েকের রসদ মজুত আছে। তবে তারপর কী হবে জানি না।''
আরও পড়ুন- রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে ভারতের অবস্থানে অসন্তুষ্ট ইউক্রেন
এদিকে, ইউক্রেনে আটক ভারতীয়দের ফেরানোর জোরদার তৎপরতা চালাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই বিদেশ মন্ত্রকের হেল্পলাইন, ইমেলে অনবরত যোগাযোগ করছেন ইউক্রেনে আটকে থাকা বহু ভারতয় নাগরিক। কেরলের ওই যুবক এপ্রসঙ্গে বলেন, ''ভারতীয় দূতাবাস আমাদের ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে। তবে আমরা জানি না কিভাবে আমরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে পারব। কারণ, যে কোনও সময় গোলাগুলি চলতে পারে। পশ্চিম সীমান্তে পৌঁছাতে কমপক্ষে ১২ ঘন্টা সময় লাগবে। প্রত্যেকে তাঁদের ব্যাগে নথি এবং কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত রেখেছে।''
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে রাশিয়ান বাহিনীর আক্রমণের পরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ভারতীয় ছাত্রদের আরও একটি দল একটি বাঙ্কারের ভিতরে রয়েছে। ঐশ্বরিয়া দিলীপকুমার নামে এক ছাত্র বলেন, ''আমরা শহরের অনেক জায়গায় ঘন ঘন গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আমাদের প্রায় ২৫০ জনকে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারে রাখা হয়েছে। সকালে গোলাগুলি থেকে কিছুটা থামলে আমরা হোস্টেলের ঘরে ফিরে আসি। কিন্তু এখন আবার আমাদের বাঙ্কারে ফিরে যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।''
Read story in English