গত ৯ মার্চ ভারতীয় ক্ষেপনাস্ত্র পাক ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। যা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। পরে দিল্লির তরফে পাকিস্তানের অভিযোগের কথা স্বীকার করা হয়েছিল। এবার ভারতীয় ক্ষেপনাস্ত্রের পাক ভূখণ্ডে অবতরণ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। গোটাটাই 'অসাবধানতাবশত' হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজনাথ। দাবি করেছেন, ভারতীয় ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ। সম্পূর্ণটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, 'ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিদর্শনের সময় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাক্রমে একটি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চ হয়ে গিয়েছিল। পরে জানা যায় সেটি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে অবতরণ করেছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এই ঘটনায় হতাহতে খবর না থাকায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি।'
সংসদকে রাজনাথ সিং জানান, কেন এই ঘটনা ঘটল তার সত্য উদঘাটনে 'আনুষ্ঠানিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে'। বিবৃতিতে উল্লেখ, 'আমি এটাও বলতে চাই যে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরীক্ষণের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সমরাস্ত্রের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চস্তরে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। যদি কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়, তাহলে তা অবিলম্বে সংশোধন করা হবে।'
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হাউসকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, 'ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ। তাছাড়া, আমাদের নিরাপত্তা পদ্ধতি এবং প্রোটোকলগুলি সর্বোচ্চ ক্রম এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যালোচনা করা হয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সু-প্রশিক্ষিত এবং সুশৃঙ্খল এবং এই ধরনের ব্যবস্থা পরিচালনায় ভালোভাবে অভিজ্ঞ।'
গত বুধবার ৯ মার্চ, ভারতীয় সুপারসনিক মিসাইল পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। লাহোর থেকে প্রায় ২৭৫ কিলোমিটার দূরে মিয়া চান্নুর কাছে একটি কোল্ড স্টোরেজে আঘাত করে ভারতীয় মিসাইলটি। যা ১১ মার্চ প্রকাশ্যে আনে পাক সেনাবাহিনী। তাদের অভিযোগ, ওই মিসাইলের দরুন আকাশপথে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বিমান ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল। যদিও ঘটনায় কোনও প্রাণহানি হয়নি। পাক সেনার দাবি, সিরসা থেকে মিসাইলটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। যা আচমকা উত্তর-পশ্চিম দিকে চলে যায়। ফলে প্রবেশ করে পাক ভূখণ্ডে। ৪০ হাজার ফুট উচ্চতায় এই মিসাইলের গতি শব্দের চেয়ে প্রায় আড়াই থেকে তিন গুণ বেশি ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। ইসলামাবেদে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এই ঘটনায় যৌথ তদন্তের দাবি জানায় ইমরান সরকার।
১১ মার্চ পাক অভিযোগ শিকার করে নয়াদিল্লি। প্রতিরক্ষামন্ত্র বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল ,'নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময়, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে একটি ক্ষেপণাস্ত্র দুর্ঘটনাক্রমে উৎক্ষেপিত হয়ে গিয়েছিল।' রাজনাথ সিংয়ের এদিনের বিবৃতিতেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে।
যদিও কোন পক্ষই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে চিহ্নিত করেনি, পাকিস্তানের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, এটি ছিল ভারতের সুপার-সনিক সারফেস-টু-সারফেস ব্রহ্মোস ক্রুজ মিসাইলের সংস্করণ, যা রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০০৫ সালে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সম্পর্কে আগাম তথ্য ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি রয়েছে, তবে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য ওই চুক্তি প্রযোজ্য নয়।
Read in English