মার্কিন কংগ্রেসের বেসরকারি উপদেষ্টা সংস্থার ভিসা বাতিল করল ভারত সরকার। এই সংস্থা ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে ১ জুনে লেখা এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত মার্কিন কমিশন (USCIRF)-এর এই বিষয়টি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংসদে পেশ করেছিলেন।
এপ্রিল মালে USCIRF মার্কিন প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করে ভারতকে উদ্বেগজনক দেশ বলে চিহ্নিত করা হোক। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পর ২০০৪ সালে এই সংস্থা এরকম সুপারিশ করেছিল। USCIRF-এর বার্ষিক রিপোর্টে দুবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে একবার তিনি অভিবাসীদের উইপোকা বলে অভিহিত করার জন্য।
নিশিকান্তকে লেখা চিঠিতে জয়শংকর বলেছেন, “ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে আসতে চেয়ে USCIRF-এর ভিসার আবেদন আমরা বাতিল করে দিয়েছি। কারণ আমরা USCIRF-এর মত বিদেশি সংস্থার ভারতের নাগরিকদের সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত অধিকার নিয়ে মন্তব্য করার কোনও অবকাশ আছে বলে মনে করি না।”
USCIRF-এর দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন প্রশাসন বা মার্কিন কংগ্রেসের মতামত নয়
মন্ত্রী চিঠিতে আরও লিখেছেন, “USCIRF ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে একপাক্ষিক, বেঠিক ও বিপথচালনাকারী পর্যবেক্ষণ করার জন্য পরিচিত। আমরা ভারতের সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে এমন তথ্য ছডানো আটকাতে বদ্ধপরিকর।
জয়শংকর লিখেছেন, এর আগেই বিদেশমন্ত্রক USCIRF-এর বিবৃতি খারিজ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারত ভারতের সার্বভোমত্ব ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার যা সংবিধান কর্তৃক সুরক্ষিত, সে সম্পর্কে কোনও রকম বাইরের নাক গলানো বা মন্তব্য করা অনুমোদন করবে না।”
এপ্রিল মাসের রিপোর্টে USCIRF বলেছিল ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৯ সাল থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হামলার মুখে পড়ছেন। একই সঙ্গে তারা এ দেশে ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির কথাও বলেছিল। পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া, চিন ও সৌদি আরব সহ আরও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতকেও বিশেষ উদ্বেগজনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলেছিল।
USCIRF সিএএ - এনআরসির মত বিষয়ের উল্লেখ করেছিল, উল্লেখ করা হয়েছিল জম্মুকাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হ্রাস ও ফেব্রুয়ারির দিল্লি দাঙ্গার মত বিষয়েরও। সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছিল সিএএ এনপিআর জাতীয় পর্যায়ের এনআরসির প্রাথমিক ধাপ।
একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছিল বিতর্কিত বাবরি মসজিদকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের কথাও।
USCIRF ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থা ও আধিকারিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল করার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা ও তাদের আমেরিকায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
রিপোর্ট প্রকাশের সময়ে ভারত বলে USCIRF-এর পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য নতুন কিছু নয়, তবে তা এবার নতুন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে।