দেশের করোনার সংক্রমণবৃদ্ধি ক্রমশ সংকটজনক পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। যথেষ্ট উদ্বেগ দেখিয়ে এমন ঘোষণা করল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পাশাপাশি রাজ্যগুলোকে নমুনা পরীক্ষা, আইসোলেশনে জোর দেওয়া, সংস্পর্শ চিহ্নিত করা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
এদিকে, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্য ৬০ হাজারের উপর ছিল। তবে, গতকালের পরিসংখ্যান কিছুটা নিম্নমুখী। এর মধ্যেই মহারাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি শহরে নাইট কার্ফু সহ নানা নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে ফের লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে মহারাষ্ট্র। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বক্তব্যেই মিলেছে সেই ইঙ্গিত। আর তারপর থেকেই মহারাষ্ট্রের কর্মরত বিপুল সংখ্যায় পরিয়ায়ী শ্রমিকদের থরহরি কম্প অবস্থা। বারে বারেই তাঁদের স্মৃতিতে ফিরছে এক বছরের আগের দুর্বিসহ যন্ত্রাকর পরিস্থিতির কথা।
গহতবছর ২৪ মার্ত রাত থেকে দেশজুড়ে প্রথমে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর থেকে সময় যত এগিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা ততই শোচনীয় হয়েছিল। রোজকার বন্ধ, অর্থের সংস্থার না হওয়ায় নাওয়া খাওয়া লাটে উঠেছিল। ভাড়া গুনতে না পারায় ঘরছাড়া হয়ে রাস্তায় দিনের পর দিন কাটাতে হয়েছে পরিযায়ীদের।
কেন্দ্রী-রাজ্য সরকার পরিযায়ীদের পাশে থাকার কথা বললেও বাস্তবে তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কিঞ্চিৎকর মাত্র। শেষ পর্যন্ত অবিশ্রান্ত শ্রমিকরা কেউ চড়া ভাড়ায় দেশে ফিরেছেন, কেউবা আবার পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার কিলোমিটার পথ। ঘটেছে প্রাণহানিও। ক্লান্ত পরিয়ায়ীরা হাঁটতে হাঁটতে রেল লাইনের ট্র্যাকে ঘুমিয়ে পড়ায় ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়েও নিহত হন বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। এরপরও বিতর্ক থামেনি। পরিয়ায়ীদের ঘরে ফেরাতে কেন্দ্র ও বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল পরিচালিত রাজ্যগুলোর মধ্যে বাকবিতণ্ডা তুঙ্গে উঠেছিল। যা মনে করেই শিউরে উঠছেন মহারাষ্ট্রে কর্মরত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা।
জরিমারি এলাকায় বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিক মেহেবুব আলির কথায়, ‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। এখনও লকডাউন ঘোষণা না হলেও গতবারের যন্ত্রণা আমরা কেউ পেতে চাই না। রোজগার পুরোপুরি বন্ধ ছিল, তাও কোনও মতে জমানো ৩ হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরেছিলাম ট্রাকের মাথায় চড়ে।’ আলির থেকেই জানা গেল, রেলের টিকিট বুকিংয়ের জন্য এখন চাহিদা তুঙ্গে। গত সপ্তাহেই তাঁর বাই উত্তরপ্রদেশে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু, বুকিং কাউন্টারে গিয়ে আলি জানতে পারেন ৮ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ফেরার জন্য এখন কোনও বার্থ ফাঁকা নেই। আসলে গত বছরের পরিস্থিতির কথা ভেবে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন আলি। কিন্তু আপাতত সেগুড়ে বালি। লকডাউনে কোনও নতে বাড়ি ফিরলেও পেটের তাগিদে ফের গত বছর অগাস্টে মুম্বই ফিরেছিলেন আলি। তবে, গত দু’মাস ধরে তাঁদের বেতন অর্ধেক দেওয়া হচ্ছে। মালিকপক্ষ জানিয়েছে, চাহিদা কম থাকায় পুরো বেতন দেওয়া যাবে না।
নাইট কার্ফু জারি হয়েছে। সম্ভবত এরপরই লকডাউনের ঘোষণা হতে পারে। আপাতত যা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে পরিয়ায়ী শ্রমিকদের। লোডারদের একটি গোষ্ঠীর সুপারভাইজার ঘটকোপারের মুন্না গিরির কথায়, ‘চার-পাঁচ মাস আগে এখানে ফিরেছি। গত বছর বেশিরভাগই ঋণ করে বাড়ি ফিরেছিলাম। ঘরে অর্থ নেই। তাই পেটের টানেই ফের এখানে এসেছি। আশা করবো লকডাউন হলে এবার অন্তত পরিযায়ীদের ফেরাতে সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে। যদি দু’দিন আগে অন্তত লকডাউন জারির কথা বলা হয়, তবেও আমরা যেকোনও উপায়ে বাড়ির পথে রাওনা হয়ে য়াতে পারি।’
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শীর্ষ আধিকারিক দীপক পারাধকর বলেন, ‘লকডাউন নিয়ে জানার জন্য দিনে অন্তত ১০টা করে ফোন পাচ্ছি। অনেকেই গত বছরের কথা ভেবে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন আগেভাগে যেন লকডাউনের কথা বলা হয়। অনেকেই বাড়ি ফিরপতে টিকিটের দরবার করছেন।’