Advertisment

ভারতে ১ শতাংশ ধনীর হাতে ৭০ শতাংশ দরিদ্রের চারগুণ বেশি সম্পদ, বলছে রিপোর্ট

ভারত সম্পর্কে অক্সফ্যামের বক্তব্য, ৬৩ জন ভারতীয় ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষের বাজেট, অর্থাৎ ২৪ লক্ষ ৪২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ নাগরিকদের হাতে রয়েছে দেশের দরিদ্রতর ৭০ শতাংশ অথবা ৯৫৩ মিলিয়ন (৯৫ কোটি ৩ লক্ষ) মানুষের চেয়ে চারগুণ বেশি সম্পদ। অন্যদিকে ভারতের সমস্ত কোটিপতির সম্পদ একত্রিত করলে তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে দেশের সারা বছরের বাজেট। এমনটাই বলছে সোমবার প্রকাশিত এক নয়া সমীক্ষা।

Advertisment

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF)-এর ৫০ তম বার্ষিক সম্মেলনের আগে 'টাইম টু কেয়ার' শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন অক্সফ্যাম (Oxfam) আরও বলে যে বিশ্বের ২,১৫৩ জন কোটিপতির হাতে রয়েছে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের (৪.৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি মানুষের) চেয়ে বেশি সম্পদ।

সমীক্ষার ফল বলছে যে বিশ্ব জুড়েই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হারে সমাজের গভীরে প্রবেশ করেছে অসাম্য, এবং গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে কোটিপতিদের সংখ্যা, যদিও গত এক বছরে কমেছে তাঁদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ।

বার্ষিক সম্মেলনে অক্সফ্যামের প্রতিনিধিত্ব করতে আসা অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহর বলেন, "ধনী এবং দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান ততক্ষণ মেটানো যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত ভাবে অসাম্য-দূরীকরণ নীতি অনুসরণ না করা হচ্ছে, কিন্তু এই নীতি অনুসরণ করার মতো দায়বদ্ধতা খুব কম সরকারেরই আছে।"

সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে পাঁচদিন ব্যাপী এই সম্মেলন, যেখানে আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে অগ্রাধিকার পেতে পারে আয় এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মতো ইস্যু। অসাম্য জনিত উৎকণ্ঠার কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় সব মহাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক অশান্তি, যদিও প্রতি ক্ষেত্রেই হয়তো তাৎক্ষণিক কারণ অন্য, যেমন দুর্নীতি, সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন, বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, বলছে WEF-এর রিপোর্ট।

গত তিন দশকে বিশ্বে কিছুটা কমেছে অসাম্যের হার, পাশাপাশি বহু দেশে বেড়েছে অভ্যন্তরীণ আয়ের ব্যবধান, বিশেষত উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে। অক্সফ্যামের রিপোর্টটিতে আরও বলা হয়েছে, "লিঙ্গ বৈষম্যমূলক" অর্থনীতিগুলি সাম্যের সঙ্কটকে মদত দিচ্ছে, কারণ তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে দরিদ্র মহিলাদের ক্ষতি করে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এক শ্রেণীর বিত্তবান।

ভারত সম্পর্কে অক্সফ্যামের বক্তব্য, ৬৩ জন ভারতীয় ধনকুবেরের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষের বাজেট, অর্থাৎ ২৪ লক্ষ ৪২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। বেহর জানিয়েছেন, "আমাদের ভগ্নপ্রায় সব অর্থনীতি সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে কোটিপতি এবং বড় ব্যবসাগুলির পকেট ভরছে। কোটিপতিদের আদৌ কোনো অস্তিত্ব থাকা উচিত কিনা, তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।"

রিপোর্টে বলা হয়েছে, একজন মহিলা গৃহকর্মী এবং একজন প্রযুক্তি সংস্থার সিইও-র আয়ের মধ্যে সমতা আনতে সময় লাগবে ২২,২৭৭ বছর। আরও বিশদে বলতে গেলে, একজন সিইও-র এক সেকেন্ডের গড় আয় ১০৬ টাকা, যার ফলে তিনি ১০ মিনিটে যত আয় করবেন, সেই আয় একজন গৃহকর্মী করবেন এক বছরে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে ভারতে মহিলা এবং মেয়েরা প্রতিদিন ৩.২৬ বিলিয়ন (৩২৬ কোটি) ঘন্টা নানা ধরনের সেবার কাজ করেন, বিনা পারিশ্রমিকে। ভারতীয় অর্থনীতিতে এই বিনা পারিশ্রমিকে কাজের আর্থিক অবদান বছরে অন্তত ১৯ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সালের গোটা শিক্ষা বাজেটের (৯৩ হাজার কোটি টাকা) প্রায় ২০ গুণ।

এছাড়াও সেবা অর্থনীতিতে (care economy) সরাসরি সরকারি বিনিয়োগ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (গ্রোস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট বা জিডিপি) ২ শতাংশ হলেও ১১ মিলিয়ন বা ১.১ কোটি মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে, যা কিনা ২০১৮ সালে খোয়া যাওয়া ১.১ কোটি চাকরির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।

বেহরের বক্তব্য, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে কম লাভবান হচ্ছেন মহিলা এবং মেয়েরা। "ওঁরা কোটি কোটি ঘন্টা ব্যয় করেন গৃহকর্মে, সন্তানদের দেখাশোনায়, এবং বয়স্কদের সেবাযত্নে। এই বিনা পারিশ্রমিকের কাজ হচ্ছে সেই 'লুকোনো ইঞ্জিন', যা সচল রাখে আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, এবং সমাজকে।" বেহর আরও বলেন, "এর চালিকাশক্তি হলেন সেইসব মহিলা, যাঁদের শিক্ষালাভের সুযোগ ঘটে নি, যাঁরা ভদ্রস্থ রোজগার করেন না, যাঁদের সমাজ পরিচালনা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই, অতএব তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে একেবারে তলানিতে বন্দী হয়ে আছেন।"

অক্সফ্যামের বক্তব্য, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে অতিরিক্ত রকমের কম ট্যাক্স আদায় করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। এই কর আদায় হলে সেবা প্রদানের ভার বহন করতে হতো না মহিলাদের, এবং মোকাবিলা করা যেত দারিদ্র এবং অসাম্যের। এছাড়াও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সরকারি আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ জন পরিষেবা এবং পরিকাঠামো, যা মহিলা এবং মেয়েদের কর্মভার কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বিশ্বজোড়া সমীক্ষার ফল বলছে, পৃথিবীর ২২ জন সবচেয়ে ধনী পুরুষের কাছে যা সম্পদ রয়েছে, তা সমগ্র আফ্রিকার সমস্ত মহিলার সম্পত্তির চেয়ে বেশি।

প্রতিদিন ১২.৫ বিলিয়ন (১,২৫০ কোটি) ঘন্টা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেন বিশ্বের মহিলারা, যার আর্থিক মূল্য অন্তত ১০.৮ ট্রিলিয়ন (১ কোটি ৮০ হাজার) ডলার, যা আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি শিল্পের উৎপাদনের তিনগুণ।

সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষ যদি আগামি ১০ বছর ধরে তাঁদের আয়ের ওপর স্রেফ ০.৫ শতাংশ বাড়তি কর দেন, তাহলেই বয়স্কদের বা শিশুদের সেবা, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে ১১৭ মিলিয়ন (১১.৭ কোটি) চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব, যার জন্য বিনিয়োগের ওপর ভরসা করতে হবে না।

অক্সফ্যাম তাদের তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে Credit Suisse Research Institute-এর গ্লোবাল ওয়েলথ ডেটাবুক (Global Wealth Databook) ২০১৯ এবং ফোর্বসের (Forbes) ২০১৯ সালের কোটিপতিদের তালিকা।

Black money
Advertisment