দেশের প্রথম আদিবাসী ও সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা। সকাল ১০টা বেজে ১৫ মিনিটে শপথ বাক্য পাঠ করতে শুরু করেন দেশের দ্রৌপদী মুর্মু। এনডিএ প্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মু বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনি হলেন দেশের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে, দ্রৌপদী মুর্মু বলেন "স্বাধীনতার ৭৫ তম বছরে দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত"। তিনি যোগ করেন "স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারী আমিই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। এমন এক সময়ে আমি এই দায়িত্ব পেলাম যখন ভারত আগামী ২৫ বছরের স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে"।
সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আরও বলেন, “ রাষ্ট্রপতি পদে পৌঁছানো আমার ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, এটি ভারতের প্রতিটি দরিদ্রে মানুষের কৃতিত্ব। আমার মনোনয়ন প্রমাণ করে যে ভারতের দরিদ্ররা কেবল স্বপ্ন দেখতে নয়, সেই স্বপ্নগুলিও পূরণ করতে পারে,"। এছাড়াও, নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, "আমি চাই মহিলারা আরও ক্ষমতার অধিকারী হোন, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলারা তাদের অবদান ক্রমশই বাড়িয়ে তুলছে"। এদিন তিনি বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গেও দেখা করেন। একই সঙ্গে তিনি ২৬ জুলাই কার্গিল দিবস উপলক্ষে দেশের সেনাবাহিনীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন , "মঙ্গলবার ২৬ জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস। দিনটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বের প্রতীক। আমি কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং দেশের সকল নাগরিককে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি"।
রাষ্ট্রপতি পদে শপথ দ্রৌপদী মুর্মুর। দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসাবে সকাল ১০:১৫ মিনিটে সংসদের সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠিত হল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যের গভর্নর সহ বিশিষ্ট অতিথিবর্গ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমন ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান । সংসদের সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠিত হবে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার উপস্থিতিতে শপথ নিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এদিন সকাল সাড়ে আটটায় রাজঘাটে পৌঁছে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর কাল ৯টা ২২ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছান দ্রৌপদী মুর্মু। সোমবার সকালে তেরঙ্গা শাড়িতে শপথ নিলেন দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উপ-রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার উপস্থিতিতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে হাজির হন দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। ঠিক তার পরেই সকাল ১০টা বেজে ১৫ মিনিটেই দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হিসাবে নেন নেন দ্রৌপদী মুর্মু।
সকাল ১০টা বেজে ২৩ মিনিটে ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি সেন্ট্রাল হলে তাঁর প্রথম ভাষণ দিলেন ভারতের এযাবৎ কালের সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি। এরপর সকাল ১০টা বেজে ৫৭ মিনিটে একটি আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রার মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে ফেরেন। দেশের দ্বিতীয় মহিলা হিসাবে সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসলেন ৬৪ বছর বয়সী আদিবাসী মহিলা।
২১শে জুলাই প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী যশবন্ত সিনহাকে পরাজিত করেন। দ্রৌপদী মুর্মু আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রথম ভারতীয় যিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। ২১ জুলাই ফলাফল প্রকাশিত হয়।
১৯৫৮ সালের সালের ২০ শে জুন অধীশর ময়ূরভঞ্জ জেলার উপরবেদা গ্রামে একটি সাঁওতাল পরিবারে জন্ম দ্রৌপদী মুর্মুর। মুর্মুর যাত্রা অনেকের কাছেই প্রথমের একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। গ্রামের প্রথম মহিলা হিসাবে কলেজের গণ্ডি পেরিরে সেদিন সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি।
রাজনীতিতে তার কর্মজীবন শুরু করার আগে, মুর্মু রায়রাংপুরের শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারে একজন শিক্ষক হিসাবে তাঁর দায়িত্ব সামলেছেন। এরপর তিনি ওডিশা সরকারের সেচ ও বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি প্রথম রায়রাংপুর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হন। এরপর ২০০০ সালে ওডিশা বিধানসভায় প্রথম জয় লাভ করে বিজেডি-বিজেপি জোট সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের প্রথম মহিলা গভর্নর হিসাবে তিনি দায়িত্ব সামলান।