আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফের শারদীয় উৎসব উপলক্ষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্লাব এবং পুজো কমিটিগুলিকে যে ১০,০০০ টাকা অনুদানের কথা ঘোষণা করেছিলেন, তার ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার দুই পক্ষের শুনানির পর এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন দুই পর্যায়ে প্রায় চার ঘণ্টা শুনানি চলে। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।
এদিন হাইকোর্টে দুই পক্ষের টানটান সওয়াল চলে।রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত অনুদানের সমর্থনে যুক্তি খাড়া করেন। আদালতে তিনি জানান, ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা পুলিশ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পুজো অনুদানের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতের স্থগিতাদেশের জন্য তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তখন বিচারপতি করগুপ্ত এজিকে প্রশ্ন করেন, এ খাতে কত টাকা কীভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে? এজি অর্থ দপ্তরের হিসেবের নথি আদালতে পেশ করে জানান, অর্থ দপ্তরের থেকে বরাদ্দ সমস্ত অর্থ ট্রেজারিতে চলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: আইনি জটে মুখ্যমন্ত্রীর পুজো অনুদান!
মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, পুজো কমিটিগুলিকে নতুন এই স্কিমে টাকা দিয়ে সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করছে সরকার। বিচারপতি করগুপ্ত এজিকে প্রশ্ন করেন, এই স্কিম কি সংবিধানের কোনও নির্দিষ্ট ধারার আওতায় পড়ছে? উত্তরে এজি বলেন না, তবে এই স্কিম পরের বছর বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। তখন বিচারপতি বলেন, কিন্তু এখানে তো টাকা খরচ করা হয়ে গিয়েছে? উত্তরে এজি জানান, ২৮২ ধারায় জনকল্যাণ প্রকল্পে সরকারের আর্থিক সাহায্য করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও ২০৬ ধারা অনুয়াযী কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে বাজেটের খসড়া পেশ করতে পারে সরকার। বিচারপতি পালটা প্রশ্ন করেন, এমন কি কোন বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে যেখানে অর্থ বরাদ্দ করতে হল রাজ্যকে? এজি জানান, ২৮২ ধারায় রাজ্যের ক্ষমতা রয়েছে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে জনগণের কাজে অর্থ বরাদ্দ করতে পারে রাজ্য।
বিকাশরঞ্জনবাবু জানতে চান, কি এমন আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যেখানে পুজো কমিটিগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে হল রাজ্য সরকারকে? এজির বক্তব্য, এই অর্থ পুজোর খরচ নয়, বরং কলকাতা ও রাজ্য পুলিশকে পুজো কমিটিগুলি যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে সাহায্য করে, তার অনুদান। সুপ্রিম কোর্টও এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। কোনও করদাতা সরকারের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন না, কোন খাতে টাকা খরচ হচ্ছে। বিচারপতি করগুপ্ত এজিকে প্রশ্ন করেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কোনও নির্দেশিকা আছে কী না। এজির জবাব, না নেই, কিন্তু তা বলে কি কোনও খরচ হবে না?
আরও পড়ুন: ৩০ দিনে পাঁচটি বিপর্যয়, কিনারা হয়নি একটিরও
অ্যাডভোকেট জেনারেলের বক্তব্য, সংবিধানের ২৮২ ধারায় সাধারণের স্বার্থে টাকা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সরকারের একচ্ছত্র অধিকার আছে টাকা ব্যবহারের। কোর্ট এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। পুজোর অনুদানের ২৮ কোটি টাকা রোড সেফটির প্রচারে ব্যবহৃত হবে। কোর্ট এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
বিকাশবাবু জানান, একমাত্র বাজেটে বরাদ্দ খরচই জনসাধারণের কাছে প্রশ্নাতীত। আর কোনও খরচ নয়। প্রতি বছর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য টাকা বরাদ্দ থাকে। যাতে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ-সহ একাধিক প্রকল্প জড়িত থাকে। এ বছর বাজেটে তার জন্য এক কোটির কিছু বেশি টাকা বরাদ্দ ছিল। তাহলে ২৮ কোটি কীভাবে খরচ হল? মুখ্যমন্ত্রী যখন ঘোষনা করেন তখন আলাদা করে কোন অর্ডার হয়নি। তাহলে এটা কোনও অর্ডার বলা যাবে না, বরাদ্দ বলতে হবে। পুজোর জন্য এই বরাদ্দ অসাংবিধানিক, কারণ এই আদালত ইমাম ভাতাকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছিল।
সরকারের পক্ষে শক্তিনাথ মুখার্জী বলেন, ট্যাক্স দেন যাঁরা, তাঁরা প্রশ্ন তুলতে পারেন না কেন সরকার জনগণের টাকা খরচ করেছে। এর জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট কমিটি রয়েছে। অডিটর ও কম্পট্রোলার পরে ঠিক করবেন কী করা হয়েছে টাকা নিয়ে। সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে। এ বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
বিচারপতি কর গুপ্ত বলেন, "কেউ হস্তক্ষেপ করছে না। শুধু জানতে চাওয়া হচ্ছে টাকা কি কার্যকর হয়েছে? চেক-ভালভ আছে কি? জলের গতিপথ পরিবর্তন বা স্রোত আটকাতে চাইছি না। শুধু লিকেজ আটকাতে চাইছি।"
এই মামলায় ফের শুনানি বুধবার। আদালত রায় দেবে সম্ভবত বৃহস্পতিবার।