International Day Against Drug Abuse and Illicit Trafficking: ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবিটার কথা মনে আছে? পাঞ্জাবের ঘরে ঘরে মাদক নেশার ভয়ঙ্কর ছবি সেলুলয়েডে তুলে ধরেছিলেন পরিচালক অভিষেক চৌবে। কিন্তু শুধু পাঞ্জাব তো নয়, মাদকের সর্বনাশা নেশায় বুঁদ এ রাজ্যও। হেরোইন, কোকেনের মতো বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আজকাল আখছার বাজেয়াপ্ত করছে পুলিশ, যে খবর এখন রোজনামচা হয়ে গেছে। এতেই শেষ নয়, মাদকাসক্তির ফাঁদে সব জেনেশুনে পা দিচ্ছেন জেন ওয়াই, যা এই মুহূর্তে সমাজের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পকেটে লুক্কায়িত হয়ে অবলীলায় ঢুকছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। কিন্তু এর শেষ কোথায়? মাদকের কারবার রোখার চেষ্টা কম করেনি প্রশাসন। মাদক নেশা নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে কলকাতা পুলিশও। সচেতনতামূলক প্রচার থেকে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ, কোনকিছুরই খামতি রাখছে না লালবাজার।
তবে গ্রেফতার, বাজেয়াপ্তি যতই হোক, সমাজ যদি সচেতন না হয়, তাহলে এই মারণব্যাধির উপশম ঘটবে না। বিশ্বকাপ ফুটবলের মরসুমে সেকারণেই আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে কৌতুকের ঢঙে মাদক নিয়ে জনমুখী বার্তা দিল কলকাতা পুলিশ। ফুটবল মাঠে সেম সাইড গোল যেমন মারাত্মক ভুল, তেমনই মাদক নেশার জালে নিজেদের জড়িয়ে ফেলাটাও জীবনের মারাত্মক ভুল, আর সে বার্তা দিতেই কলকাতা পুলিশের প্রচারে উঠে এসেছে ‘সেম সাইড গোল ভুলেও নয়!’ ফেসবুকে যে পোস্ট ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাধুবাদ পেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন আসে, এতকিছুর পরও সমস্যা দূর হচ্ছে না কেন? কোথায় খামতি? এ প্রসঙ্গে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রিমা মুখোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, "এ ব্যাপারে সমাজের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা বোধহয় এই সমস্যা ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছি। সমাজের সামগ্রিক স্তরে এ সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানো উচিৎ। নামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা, এটা রোখা নিয়ে আরও কাজ করা দরকার।" তাঁর সঙ্গে সহমত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রাপ্তি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক পরীক্ষিৎ ধর। তিনি বললেন, "এ ব্যাধি আটকানো সম্ভব নয়, স্কুল-কলেজে আরও বেশি করে সচেতনতা বাড়ানো দরকার, তবে যদি এ সমস্যা কিছুটা নির্মূল করা যায়।"
মাদক কারবার রোখা নিয়ে কলকাতা পুলিশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? জয়েন্ট সিপি ক্রাইম প্রবীণ ত্রিপাঠী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "আমরা গত ২ জুন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছি এ নিয়ে। মূলত দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছি। এক, আমরা সারা বছরই অভিযান চালাই। বহু মাদক ব্যবসায়ীকে পাকড়াও করা হয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য। দুই, মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা করছি, যাতে কেউ মাদকচক্রে না জড়িয়ে পড়েন। মাদকাসক্তদের জীবনের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য আমরা শুদ্ধি প্রকল্প শুরু করেছি, যেখানে চিকিৎসার মাধ্যমে নেশাগ্রস্তদের সুস্থ জীবনে ফেরানো হচ্ছে, ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে অনেককে চাকরিও দেওয়া হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: শুদ্ধি, কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে জীবনের মূল স্রোতে ফিরছেন ওঁরা
অন্যদিকে, তরুণ প্রজন্মের আসক্তির ব্যাপারে রিমা মুখোপাধ্যায় বললেন, "গাঁজা খাওয়াকে অনেকেই কুল ব্যাপার বলে ভাবেন। আসলে যাঁরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, তাঁদের মাইন্ডসেট বদলানো খুব জরুরি।" এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, পারিবারিক অশান্তি, অবসাদ অনেকসময়ই মাদকের দিকে ঠেলে দেয় আজকের প্রজন্মকে।
তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে যে অনেকেই রেহাই পাচ্ছেন, সে ব্যাপারে বিশ্বাস রয়েছে পরীক্ষিৎ ধরের। তিনি বললেন, "আমাদের এখানে নেশামুক্ত করার জন্য কাউন্সেলিং, ট্রেনিং, সব কিছুর ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকেই সুস্থ জীবনে ফিরছেন।" পরীক্ষিৎবাবুর মতে, আগে মাদক সমস্যায় ভুক্তভোগীদের সেরে ওঠার সংখ্যাটা ছিল ২ শতাংশ, এখন চিকিৎসার ফলে এই সংখ্যাটা ৩০ শতাংশে দাঁড়াবে।