আগে সিবিআই তদন্ত, তারপর স্কুল চালু। আপাতত এই দাবিতে সোচ্চার ইসলামপুরের দাড়িভিটের বাসিন্দারা। এখনও পুরো স্কুল চত্বর লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। কীভাবে স্কুল চালু করা যাবে, সেই চিন্তায় ঘুম ছুটেছে প্রশাসনের। বিধায়ক জানিয়েছেন, চেষ্টা হচ্ছে স্কুল খোলার।
সব থেকে বড় প্রশ্ন, দাড়িভিট হাইস্কুলের পঠন-পাঠন শুরু হবে কবে থেকে? গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার বক্তব্য, আগে গুলিতে মৃত দুই ছাত্রের প্রতি সুবিচার হোক। তারপর স্কুল খোলা যাবে। অন্য দিকে স্থানীয় বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, স্কুল খোলা নিয়ে মহকুমা শাসককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তিনি জেলা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন স্কুল চালু করার বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।
২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ চলাকালীন দুই প্রাক্তন ছাত্রের মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে দুজনের। পুলিশ সে দায় অস্বীকার করে। তারপর থেকে গ্রামে উত্তেজনা থেকেই যায়। ঘটনার দিন স্কুল চত্বর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। শুক্রবার ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, আট দিনের আগের ঘটনার চিহ্ন এখনও স্পষ্ট।
স্কুলের মাঠে এক জায়গায় ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে আগুনে পোড়া স্কুটারসহ অন্য অনেক কিছু। স্কুলের গেট খোলা। ভিতরে ঢুকলে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার সম্ভাবনা। পুড়ে যাওয়া কম্পিউটারের মনিটর, সিপিইউ থেকে শিক্ষার নানান সামগ্রী। পুরো স্কুল চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রয়োজনীয় নথি-পত্র। অফিস ঘর তছনছ। চেয়ার-টেবিল কিছুই সোজা নেই। স্কুলের দুতিনটে ঘর ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়ে রয়েছে। আট দিন ধরে এভাবেই পড়ে রয়েছে। একটি ঘরে একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন মা সরস্বতী। পড়ুয়া-শিক্ষকের কোনও অস্তিত্ব নেই স্কুলে। ঘটনার পর থেকে কোনও শিক্ষক স্কুলে আসেননি। ছাত্রছাত্রীরাও স্কুলমুখো হয়নি। সেদিন যে কী হয়েছিল, এখনও স্কুল চত্বর দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়।
সেদিন প্রধান শিক্ষকের ঘরে কী হয়েছিল? গ্রামবাসীদের কাছে থেকে প্রাপ্ত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দুই শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। প্রশাসনের কড়া নির্দেশ রয়েছে এই নিয়োগ নিয়ে, বলছেন এক শিক্ষক। এই ক্ষোভের আগুন পরে ছড়িয়ে যায়। চলে গুলি, কাঁদানে গ্যাস।
স্থানীয় বিধায়ক বলছেন, গ্রামবাসীরা নতুন দুই শিক্ষক ও পুরোনো তিনজন শিক্ষককে পছন্দ করছেন না। তাঁদের বাদ দিয়ে স্কুল চালু করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে স্কুল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ছাত্রছাত্রীদের দাবি, গুলিতে মৃত্যুর সিবিআই তদন্তও শুরু হোক। একইসঙ্গে স্কুল খোলা যেতে পারে। অভিভাবকরাও চাইছেন, দুই ছাত্র "খুনের" প্রকৃত তদন্ত শুরু হোক, যাতে দোষীরা শাস্তি পায়। তারপর স্কুল চালু হোক।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌ সরকারের বাবা সুভাষবাবু বলেন, "স্কুল তো খুলতেই হবে। তবে তার আগে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়া দরকার। গুলিতে দুজনের মৃত্যু হল। তার সঠিক বিচার করতে হবে। চাই সিবিআই তদন্ত।" দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অসীম অধিকারীর বক্তব্য, "পড়াশোনা চালু রাখতে স্কুল খুলতে হবে। কিন্তু গ্রামের যে দুজনের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল, তার বিচারের কী হবে? সিবিআই তদন্ত শুরু হওয়া দরকার। প্রয়োজনে দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে শুরু করা যেতে পারে।" অসীমের ভাই সুভাষ এই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। অসীম বলে, "ভাই ছোট। সে জিজ্ঞেস করছে, দাদা কবে স্কুল খুলবে? কেন খুলছে না স্কুল? কিন্তু দোষীদের শাস্তি তো দিতেই হবে।"