গাজায় ইজরায়েলি সৈন্যরা হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করছে। তারমধ্যেই মঙ্গলবার হামাসের ঠিকানায় বড় আঘাত হানল ইজরায়েল। মঙ্গলবার ভূগর্ভস্থ ঠিকানাগুলোতে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী আইডিএফ হামলা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি এককথায় আত্মহত্যা। তা হল, জঙ্গিপনার কাছে আত্মসমর্পণ। আইসিসের কাছে আত্মসমর্পণ। একইসঙ্গে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইজরায়েলের এই যুদ্ধ হামাসকে ধ্বংস করেই থামবে। সেই হামাসকে ধ্বংস, যারা গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলকে রক্তক্ষয়ী তাণ্ডব আর আগুনের গ্রাসে ফেলে দিয়েছিল।
বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী
ইজরায়েলের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যেই ৮ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় উত্তর গাজা ছেড়ে ইজরায়েল সেনার নির্দেশমতো দক্ষিণ গাজায় চলে গিয়েছেন। গাজার মোট বাসিন্দার সংখ্যা ২৩ লক্ষ। তার মধ্য়ে কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাষ্ট্রসংঘ পরিচালিত স্কুল-আশ্রয় কেন্দ্র বা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। এই সবের মধ্যে ইজরায়েলের গোলায় উত্তর গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।
ঘর হারানো মানুষের হাল
প্যালেস্তিনীয় উদ্বাস্তুদের জন্য কাজ করে রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা UNRWA। তারা জানিয়েছে, প্রায় ৬৭২,০০০ প্যালেস্তিনীয় তাদের স্কুল এবং অন্যান্য পরিকাঠামোগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু, এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মত ক্ষমতা তাঁদের নেই। তাদের ক্ষমতার সীমার তুলনায় বর্তমান আশ্রিতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার গুণ। ইজরায়েলি অবরোধের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ কমে গিয়েছে গাজায়। যার জেরে কয়েক হাজার মানুষ খাবার জোগারের জন্য বিভিন্ন গুদামে প্রবেশ করেছিল। যে যা পেরেছেন, খাবার লুঠ করে নিয়েছেন।
গাজার পরিস্থিতি
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা নেই। ইজরায়েল হাসপাতাল এবং বাড়ির জন্য জরুরি জেনারেটরের জ্বালানির গাজায় প্রবেশও নিষিদ্ধ করেছে। ইউএনআরডব্লিউ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি ইজরায়েলকে প্যালেস্তিনীয়দের 'সম্মিলিতভাবে শাস্তি' দেওয়া এবং উত্তর গাজা থেকে তাদের দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। তার ওপর দক্ষিণ গাজাতেও প্যালেস্তিনীয়রা নিরাপদ নন বলেই অভিযোগ করেছে রাষ্ট্রসংঘের ওই সংস্থার কর্তা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তাদের ৬৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে এক কর্মী, তাঁর স্ত্রী এবং আট সন্তানও প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন- কেরলের সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন হামাসের প্রাক্তন শীর্ষনেতা, কে এই খালেদ মাশাল?
রাষ্ট্রসংঘের সংস্থার বক্তব্য
সোমবার এই ব্যাপারে UNRWA সংস্থার মুখপাত্র জুলিয়েট তোমা, দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, 'এত অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে যে কোনও সংঘাতে রাষ্ট্রসংঘের সাহায্য বিভাগের কর্মী নিহত হওয়ার এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। এই সহকর্মীদের ছাড়া UNRWA অচল।' তার মধ্যেই অবশ্য ইজরায়েলে যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই। এমনকী, ইজরায়েলের অন্যান্য ফ্রন্টেও যুদ্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ জঙ্গিগোষ্ঠী প্রতিদিনই ইজরায়েল সীমান্তে গুলি চালাচ্ছে। ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার ইরানের সঙ্গে যুক্ত সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠীর ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।