প্রাক্তন ইসরো বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনের বিরুদ্ধে চক্রান্তের ঘটনার তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্ট কমিটি গঠন করার পর এবার সন্দেহের বৃত্তে প্রবেশ করলেন কেরালার প্রাক্তন ডিজিপি সিবি ম্যাথুজ এবং দুই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার, কে কে জশুয়া ও এস বিজয়ণ।
ম্যাথুজ এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে সিবিআই-এর তরফ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়, "গুপ্তচরবৃত্তির মামলায় তাঁদের অপেশাদারী তদন্তের" জন্য। কিন্তু কেরালার তৎকালীন মুখ্য সচিব ১৯৯৭ সালে জানান, তিনি ওই অফিসারদের বক্তব্য শুনে মনে করছেন, কোনরকম পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই।
তৎকালীন মুখ্য সচিবের ওই মন্তব্য ২০১১ সালের ২৯ জুন সমর্থন করেন সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডী। কেরালা সরকারের বক্তব্য ছিল, ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নির্দেশিকা কেউ দেন নি, না বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, না সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু গতকাল, সিবিআই-এর সুপারিশের পাক্কা ২২ বছর পর, সুপ্রিম কোর্ট অবশেষে ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা মামলা: ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
ইসরো মামলার সময় ম্যাথুজ ডিআইজি হিসেবে তদন্তের ভারপ্রাপ্ত বিশেষ দলের নেতৃত্বে ছিলেন। সিবিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ম্যাথুজ নির্বিচারে বিজ্ঞানীদের গ্রেফতারের আদেশ দেন, সম্যক জিজ্ঞাসাবাদ বা তাঁদের বয়ানের সত্যতা যাচাই না করেই। রিপোর্টে আরও বলা ছিল, ম্যাথুজ এবং তাঁর দল ইসরোর কাছ থেকে না কোনও প্রমাণ সংগ্রহ করেন, না বিজ্ঞানীদের তথাকথিত "বিদেশী সহযোগীদের" দেওয়া অর্থের সন্ধান পান।
ইসরো মামলা প্রথম প্রকাশ পাওয়ার সময়, ১৯৯৪ সালে, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বিজয়ণ রাজ্য ইন্টেলিজেন্সের সার্কেল ইন্সপেক্টর ছিলেন। যেসব বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পাকিস্তানের হাতে প্রযুক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়ার, তাঁদের সঙ্গে নাকি যোগাযোগ করেন মালদ্বীপের দুই নাগরিক, মারিয়াম রশিদা এবং ফওজিয়া হাসান। এই দুই মহিলার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিজয়ণ, এবং রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি রশিদাকে বলেন বাড়ি ফেরার প্লেনের টিকিট কাটতে। রশিদা সেইমতো ১৭ অক্টোবর, ১৯৯৪-র টিকিট কাটেন। এর পর যখন তিনি আবার বিজয়ণের সঙ্গে দেখা করেন, বিজয়ণ সেই টিকিট বাজেয়াপ্ত করে নেন এবং দুই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু সিবিআই-এর রিপোর্ট বলছে, মামলা শুরু হওয়ার পরেও টিকিট বাজেয়াপ্ত করার কথা কোথাও উল্লেখ করা হয় নি। সিবিআই এও জানিয়েছিল, বিজয়ণ রশিদার মালদ্বীপে ফেরৎ যাওয়া আটকানোর ফলেই গুপ্তচরবৃত্তির মামলা সামনে আসে।
এদিকে অপর আরেক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জশুয়া, যিনি তৎকালীন ডেপুটি পুলিশ সুপার ছিলেন, এই তথ্য নথিভুক্ত করেছিলেন যে ওই দুই মালদ্বীপের মহিলা ভারতে এসেছিলেন কিছু বিদেশী এজেন্টের হয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু সিবিআই তদন্ত করে জানতে পারে, জশুয়া একথা কোথাও বলেন নি যে ঠিক কী তথ্য বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সিবিআই আরও জানতে পারে যে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন নারায়ণনের ওপর অত্যাচার করা হয়, এমনকী তাঁর ডাক্তারি চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে হয়, কিন্তু কেসের নথিপত্রে একথার কোন উল্লেখ করেন নি জশুয়া।