হিমাচলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে একের পর সেতু-যানবাহন। গতকালই জলের তোড়ে একটি ট্রাক ভেসে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মানালির পাশাপাশি কুলু, কিনানুনর এবং ছাম্বার জলের তলায়। হিমাচলে বন্যায় আপাপত ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করছে প্রশাসন। উদ্ধার কাজে NDRF-এর ৩৯টি দলকে নামানো হয়েছে।
এমন পরিস্থিতি প্রাক্তন হিমাচল মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করবেন এবং বন্যার ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট জমা দেবেন। বিরোধী দলের নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর কুল্লু জেলার ভুন্টার শহরে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন যে ‘আমি পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং কেন্দ্র রাজ্যকে পূর্ণ সহযোগিতা করছে’। তিনি বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট যে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ সাহায্য’র আশ্বাস দিয়েছেন’।
এর সঙ্গেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দুর্যোগে নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাজ্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে দুর্যোগে আটকে পড়া মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়’। মঙ্গলবার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিতে তার নির্বাচনী এলাকা সিরাজে পৌঁছে বিরোধী নেতা জয়রাম ঠাকুর এ কথা বলেন। তিনি এদিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘এটা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্ষতি’। থুনগ বাজারের অর্ধেক ধ্বংস হয়ে গেছে। ৪ দিন হয়ে গেল প্রশাসনের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি। এমনকি দুর্যোগ নিয়েও সরকার রাজনীতি করছে’।
জয়রাম বলেন, ‘৪ দিন হয়ে গেছে কিন্তু এসডিএম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। চারিদিকে শুধু বর্জ্য কিন্তু পিডব্লিউডি আধিকারিকরদের দেখা নেই। সম্পূর্ণ অন্ধকারে মানুষজন বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের দেখা মিলছে না। জল সরবরাহ বন্ধ, পাইপ ভেসে গেলেও জলশক্তি দফতরের আধিকারিকরা এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছাননি। আজ আমার আসার খবর পেয়ে রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা এসেছেন’।
জয়রাম জানান, ‘ভূমিধসের আশঙ্কায় ১০০০-এরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে কিন্তু কেউ তাদের অবস্থা সম্পর্কে কেউ খোঁজ নিতে আসেনি। আশেপাশেও ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি ১০-১০ ফুট পর্যন্ত মাটিতে ভরা। সেজন্য কর্মকর্তাদের উচিত ত্রাণ কাজে গতি আনা এবং বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকা’।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই সরকারের আমলে রাজ্যের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়েছে। রাজ্যে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে স্থগিত করে দিয়েছে এই সরকার। একমাত্র আমার নির্বাচনী এলাকায়, আমাদের মেয়াদে শুরু হওয়া ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প আটকে রয়েছে। ২০১৭ সালে যখন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আমরা কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিং ঘোষিত কোনও প্রকল্পকে বাতিল করিনি”। তিনি বলেন, ‘এখনও শয়ে শ’য়ে পর্যটক রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আটকে রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনভাবে যোগাযোগ করতে পারছে না। আমি এখনও পর্যন্ত রাজ্যে আটকে থাকা পর্যটকদের কোনও সংগঠিত ডেটাবেস খুঁজে পাইনি”।