জ্যাক মা! নামটাই শেষ কথা। বিশাল ই-কর্মাস জগতের সম্রাট তিনি। আলিবাবার কর্ণধার। আবার অন্য আর একটা পরিচয় হল ইনি চিনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। চিনা দলের মুখপত্র ‘পিপলস ডেইলি’-র তরফে বিগত ৪০ বছরে দেশের উন্নতির স্বার্থে অসাধারণ অবদানের সোমবার প্রকাশ করা হয় ১০০ জনের একটি তালিকা। সেই তালিকারই শীর্ষে রয়েছেন জ্যাক মা। দেশের উন্নতিতে যার অবদান অনস্বীকার্য।
এটা শুনতে স্ববিরোধী লাগতে পারে যে মা এমন একটি সংস্থা থেকে আসছেন যারা সর্বহারাদের ক্ষমতায়নের কথা বলছে। কিন্তু জ্যাক মায়ের রাজনৈতিক আনুগত্য চিনের বাসিন্দাদের অবাক করে নি। যদিও জনসমক্ষে কার্ল মার্কসের নীতিতেই আস্থা রেখেছে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু মাও সেতুং পরবর্তী যুগে তারা সেখান থেকে সরে এতটাই অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে এগিয়ে গিয়েছে যে আমেরিকার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৫৫ কিলোমিটার! পৃথিবীর বৃহত্তম ব্রিজের উদ্বোধন করবে চিন
প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীর সাতের দশকে (১৯৭৮) চিন অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু করে। কমিউনিজমে পুঁজিবাদীদের দমিয়ে রাখার পন্থা থেকে সরে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নিয়ে দেশের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে। এবছর তারই ৪০ বছর পূরণ হল। বলা যেতে পারে, পুঁজিবাদী লগ্নি সাফল্যের কথা প্রকাশ করতেই এই তালিকা বের করেছে পার্টি।
জ্যাক মা চিনের 'টেক রকস্টার' এবং তাঁর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করার খবর অন্যান্যদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মানবতা ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান কেলি সাই বলেন, "জ্যাক মা পার্টির সদস্য। পার্টির তরফ থেকেই তার জানান দেওয়া হচ্ছে। এটা কি আপনাকে দলে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করছে না?"
বিষয়টি আলোচনাযোগ্য আরও একটি কারণে। এর আগে জ্যাক মা সচেতনভাবে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে গেছেন। প্রকাশ্যে যখনই তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে, তিনি প্রায়শই বলে এসেছেন, "সরকারের প্রেমে পড়ুন, কিন্তু বিয়ে করবেন না।"
যদিও আলিবাবার তরফে কেউ বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সাংহাইয়ের রিসার্চ সংস্থার দ্য হুনান রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের সবথেকে ধনী ব্যক্তি জ্যাক মায়ের পারিবারিক মোট আয় ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
শুধুমাত্র রাজনৈতিক কথা বলতেই যে চিনের মানুষ পার্টির সদস্য হন একথা ঠিক নয়। সরকারি আধিকারিক, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন তাঁদের ইচ্ছা প্রকাশে এগিয়ে আসেন। যদিও জ্যাক মা কোনওদিন প্রকাশ্যে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কথা বলেননি। কিন্তু বিগত কিছুদিনে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি চিনফিংয়ের সমর্থনে মুখ খুলেছেন।