চিকিৎসককে নিগ্রহের অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হল চিকিৎসক মহল। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে CMRI-তে এক চিকিৎসককে চড় মারার অভিযোগ ঘিরে আপাতত ঘোরালো পরিস্থিতি। চড় মেরেছেন খোদ পুলিশ আধিকারিক, বলে দাবি করেছেন এক চিকিৎসক।
অভিযুক্ত ওসিকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার না করা হলে কোনও পুলিশ কর্মীর চিকিৎসা করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন। ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে শান্তুনুবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে এ ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানান। জামিন অযোগ্য ধারায় ওই ওসিকে অবিলম্বে গ্রেফতার না করা হলে, কোনও পুলিশকর্মীরই চিকিৎসা করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পরে আবার পোস্টটি তুলে নেওয়া হয়, এবং বহু চেষ্টা সত্ত্বেও শান্তনুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় নি।
অবশ্য হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারের নিগ্রহের প্রতিবাদে আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদকের ফেসবুক পোস্ট খানিকটা "লোক দেখানো" বলে কটাক্ষ করেছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ।
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, শহরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে রুবি জেনারেল হাসপাতালে সম্ভবত স্থানান্তরিত হয়েছেন অভিযুক্ত ওসি। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, "ডিসি সাউথকে ফোনে এক চিকিৎসক মৌখিক ভাবে গোটা ঘটনা জানান। হাসপাতালের তরফে সেভাবে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি।" তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ডাক্তাররা বিপাকে পড়লে প্রায় কখনই কোনো হাসপাতাল তাঁদের পাশে দাঁড়ায় না। এক্ষেত্রে যে চিকিৎসক নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ, তিনি হাসপাতালের নিজস্ব স্টাফ। "এই অবস্থায় হাসপাতালের উচিত আরও বেশি করে তাঁকে সাপোর্ট করা," বলেন ওই চিকিৎসক।
তবে কি অভিযোগ ধামাচাপা দিতে চাইছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? পুলিশের কাছে একটি ইন্টিমেশন রিপোর্ট জমা করা হয়েছে মাত্র। যাতে ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। না আছে ওই চিকিৎসকের পাওয়া আঘাতের বিবরণ, না আছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা, যা দিয়ে অভিযোগ জানানো যায়। এ ঘটনা প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদ বলেন, "আমরা অভিযোগ পেয়েছি, খতিয়ে দেখা হচ্ছে সবটা। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" এফআইআর কি হয়েছে? জবাবে ডিসি সাউথ বলেন, "এখনও কোনও এফআইআর করা হয়নি।"
ঠিক কী ঘটেছিল তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু এটা ঘটনা যে হাতে আঘাত নিয়ে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন যাদবপুর থানার ওসি। খবরে প্রকাশ, গতরাতে শ্রীনিবাস গেদাম নামের ওই জুনিয়র চিকিৎসক পুলকবাবুর প্রেসক্রিপশন দেখতে চান। সেসময়ই দু’জনের কথা কাটাকাটি হয়। যার জেরে ওই চিকিৎসককে ওসি চড় মারেন বলে অভিযোগ। যদিও আরেক সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, চড় মারেননি বলে দাবি করেছেন ওসি।
যেহেতু হাসপাতাল এবং পুলিশ মহল, উভয়েই এই মুহূর্তে বিস্তারিত বিবরণ দিতে নারাজ, ঘটনা কোনদিকে মোড় নেয় সেটা আপাতত সময় বলবে। প্রসঙ্গত, মাস দুয়েক আগে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ডাক্তারদের সমর্থনে একটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করা হয়, যাতে জনসাধারণকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে ডাক্তাররা সমাজবন্ধু, এবং তাঁদের গায়ে হাত তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ, যার ফলে দশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।