পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনওরকম সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে পারবে না অমৃতসর শহরে। বিশেষ করে জালিয়ানওয়ালা বাগে তো নয়ই। এটুকু বলে শেষ করে দিলে মনে হতেই পারে যে ১৯১৯ সালের কথা বলা হচ্ছে এখানে। কিন্তু আমরা বর্তমানের কথা বলছি, জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ পূর্তির প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে। শহরে কিছু সংগঠনের প্রস্তাবিত প্রতিবাদ মিছিলের জেরে জীবনহানি এবং সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, এই কারণ দেখিয়ে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করেছে অমৃতসর জুড়ে।
কী হয়েছিল আজ থেকে একশো বছর আগে, তা যে কোনো স্কুলের ইতিহাস বইয়ে পাওয়া যায়। পাঞ্জাবের বিখ্যাত বৈশাখী উৎসবের দিন, ১৩ এপ্রিল, জালিয়ানওয়ালা বাগে সমবেত শয়ে শয়ে নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ার। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা নাকি যে কোনো ধরনের জমায়েতের ওপর জারি করা ডায়ারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছিলেন।
মঙ্গলবার জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, "এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তথা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ভূপিন্দর সিং ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) ১৯৭৩ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতার অধিকারে ১৪৪ ধারার আওতায় অমৃতসর পুলিশের অধীনে সমস্ত থানার এলাকায় পাঁচজন বা তার বেশি সংখ্যক ব্যক্তির সমাবেশ, প্রতিবাদ মিছিল, মিটিং বা স্লোগান তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।"
ডিসিপি সিংকে উদ্ধৃত করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়, "আমি জানতে পেরেছি যে অমৃতসর জেলায় কিছু রাজনৈতিক, কৃষক ও অন্যান্য সংগঠন সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে, এবং জীবনহানি এবং সম্পত্তির ক্ষতি ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে আশঙ্কা ছড়িয়ে দিতে, কিছু সভা, মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও ধর্নার আয়োজন করেছে... কাজেই আইন শৃঙ্খলা এবং সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন। এই আদেশ ১৭ জুন পর্যন্ত জারি থাকবে।"
উল্লেখ্য, আজ অমৃতসরে অনুষ্ঠেয় এক মোমবাতি মিছিলে হাঁটার কথা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের। এবং আগামিকাল জালিয়ানওয়ালা বাগেই একটি সমাবেশে ভাষণ দেবেন উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু।
পূর্ব ঘোষিত এই ধরনের অনুষ্ঠান সম্পর্কে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ভূপিন্দর সিং বলেন, "এই জাতীয় অনুষ্ঠান পুলিশের অনুমতি নিয়ে করা যাবে। কিন্তু পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনও সমাবেশ করা যাবে না।" পাশাপাশি ডিসিপি জোর দিয়ে বলেন, এই আদেশ কোনোরকম অপ্রীতিকর স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে না। "একেবারেই রুটিন নির্দেশ। এতে জালিয়ানওয়ালা বাগে সাধারণ মানুষের গতিবিধির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। শুধু যদি কেউ কোনো সভা সমাবেশ করতে চায়, তবেই অনুমতি লাগবে।"
কিন্তু শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজক একাধিক সংস্থা, যারা জালিয়ানওয়ালা বাগে জমায়েতের ডাক দিয়েছে, জানাচ্ছে যে এই নির্দেশের ফলে তাদের অনুষ্ঠান ব্যাহত হবে।