পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জামিয়া মমিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রবিবারের ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমা আখতার। বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশের লাঠি চালানোর তীব্র নিন্দা করেন উপাচার্য। তিনি জানান এই ঘটনার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। জামিয়াকে শান্তিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে উপাচার্য নাজমা আখতার বলেন, 'গত শুক্রবার থেকে রেজিস্ট্রার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুলিশ। এটা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। '
গতকালের ঘটনায় বহু পড়ুয়া আতঙ্কে রয়েছেন বলে দাবি করেন উপাচার্য। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস একটি রাস্তার মাধ্যমে বিভক্ত। সেই রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ারও এদিন দাবি জানান নাজমা আখতার। তাঁর আর্জি অন্যান্যদের জন্য বিকল্প কোনও রাস্তা তৈরি করুক প্রশাসন। তাঁর কথায়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি নষ্ট হলে তা ফের করা যাবে, কিন্তু রবিবারের পুলিশি নির্যাতনের প্রভাব সাড়া জীবন থাকলে কোনও পড়ুয়ার ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা বরদাস্ত করা যায় না।' বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশে নিয়ে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন জামিয়া মিলিয়ার উপাচার্য নাজমা আখতার।
আরও পড়ুন: জামিয়ার পড়ুয়াদের ওপর পুলিশের লাঠি, বিস্ফোরক টুইট ইরফান পাঠানের
নাগরিকত্ব আইন বিরোধীতায় সরব দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। আর সেই প্রতিবাদ দমন করতে গিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে লাঠি চালায় পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসে সেল। এতেই বহু পড়ুয়া জখম হন। প্রায় ৫০ জন পড়ুয়াকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৩৫ জনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সন্ধ্যা দেখা যায়, ক্যাম্পাস থেকে দু'হাত শূন্যে তুলে বের হচ্ছেন পড়ুয়ারা।
উত্তেজনার জেরে আগেই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায় জামিয়া মিলিয়ায়। শনিবার থেকে আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটির ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। রবিবারের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বা হস্টেলে সুরক্ষার অভাব বোধ করছেন ছাত্রীরা। সোমবার সকাল থেকেই তাদের ক্যাম্পাস ছাড়ার হিড়িক।
জামিয়ার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়েও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপরে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ওছোড়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। বিশিষ্ট আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপরে পুলিশি দমনপীড়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছিলেন। তার জবাবে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে প্রথমেই বলেন, 'হিংসা থামাতেই হবে। পথের দখল নিতে চাইলে সেটাই করুন। আদালতে আসবেন না'। আইনজীবীর আবেদনের ওপরে শুনানি হবে মঙ্গলবার।
আরও পড়ুন: নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের জেরে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠি
রবিবার দুপুর থেকেই দক্ষিণ দিল্লির জামিয়া সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের অনেকেই সংসদ ভবনের দিকে এগনোর চেষ্টা করে। বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই চত্বরে মেট্রো রেলের একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ এরপরই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট উড়ে আসে। পাল্টা লাঠি চার্জ শুরু করে পুলিশ। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ জামিয়া মিলিয়া ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে পুলিশ। ক্যাম্পাসের গেটে লাঠিপেটার পাশাপাশি প্রায় ৫০ পড়ুয়াকে আটকও করা হয়।
রবিবার সন্ধ্যায় বহু ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করছিলেন। সেই সময় পুলিশের লাঠিপেটায় জখম হন বহু পড়ুয়া। কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, অনুমতি ছাড়া অন্যায়ভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে পুলিশ। কেরালা থেকে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্র মুবাশিরের অভিযোগ, 'প্রার্থনার সময় পুলিশ অতর্কিতে মারতে মারতে আমাদের টেনে নিয়ে যায়। পরিচয়পত্র দেখিয়েও লাভ হয়নি। বাইরে কে কি করল তার জন্য আমাদের গায়ে কেন হাত তোলা হবে?' আরেক পড়ুয়া আজগার বলেন, 'নিজের চোখে দেখেছি ক্যাম্পাসের মধ্যে পুলিশ পড়ুয়াদের মারছে। শূন্যে দু'হাত তুলে পড়ুয়াদের বার করা হচ্ছে। আমরা অপরাধী নই যে এই ধরনের আচরণ আমাদের সঙ্গে করা হবে।'
আরও পড়ুন: LIVE: ‘কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না’, মিছিল শুরুর আগে শপথ পাঠ মমতার
অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশে নিয়ে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন জামিয়া মিলিয়ার উপাচার্য নাজমা আখতার। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে অনুমতি নিতে হয়। এক্ষেত্রে তা হয়নি। পুলিশের ভূমিকায় আতঙ্কিত পড়ুয়ারা।
দিল্লি পুলিশের ডিসিপি চিন্ময় বিশওয়াল জানিয়েছেন, 'পড়ুয়া বাদেও বহু বিক্ষোভকারী ক্যাম্পাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। ক্যাম্পাসের মধ্যে থেকেই আমাদের উদ্দেশ্য করে পাথর মারা হয়। যা থামাতেই পুলিশকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয়েছে।' বহু পড়ুয়ার বুলেট ইনজুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। জবাবে দিল্লি পুলিশের জয়েন্ট সিপি দেবেশ শ্রীবাস্তব বলেন, 'লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ছাড়া আমরা বিক্ষোভ দমনে অন্য কিছু ব্যবহার করিনি। আমাদের কাছে প্যালেট গান নেই।' সোমবার সকালেও থমথমে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
Read the full story in English