কেন্দ্রীয় রিপোর্ট ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের শীর্ষ কর্তার দাবি, উপত্যকায় আইন-শৃঙ্খলার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। ৩৭০ ধারা বাতিল ও রাজ্যকে দু'টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিনত করার পর থেকে বিশেষভাবে এই উন্নতি চোখে পড়ছে। কিন্তু, নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও স্থানীয় যুবকদের জঙ্গি দলে নাম লেখানোর ধারা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। আর এটাই এখন মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর।
কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দীন সোজ থেকে শুরু করে উপত্যকার বিভিন্ন দলের অধিকাংশ ছোট-বড় নেতৃত্ব এখন হয় গৃহবন্দি, নয়তো জেলে। তাও কেন যুবকরা সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে জঙ্গি দলে চলে যাচ্ছে? আপাতত এটাই ভাবাচ্ছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে।
কেন্দ্র ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে বিগত কয়েক বছরের আইন-শৃঙ্খলার নানা বিষয়ে পরিসংখ্যানে আকারে তুলে ধরা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিং ২০০৬ সালে হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরের অবস্থার সঙ্গে ২০১৯ সালে ৫ই অগাস্ট ৩৭০ ধারা বিলোপের পরবর্তী সময়ের তুলনা টেনেছেন। সেই সময় জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে হিংসার পরিবেশ কায়েম হয়েছিল। ২,৫০০ জনের হত্যা হয় যার মধ্যে ১১৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা।
কিন্তু, গত বছর অগাস্টের পর থেকে উপত্যকায় মাত্র ১৯৬টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে। একজনও স্থানীয় মানুষের হত্যা হয়নি। যা উল্লেখযোগ্য আগ্রগতি বলেই মনে করছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। গত বছর প্রথম ৬ মাসের তুলনায় এ বছর প্রথম ৬ মাসে হিংসার ঘটনা প্রায় ৭৮ শতাংশ কমেছে বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ।
আগাস্ট পরবর্তী সময় উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন একতরফাভাবে বৃদ্ধি, ছোট-বড় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আটকে রাখা- মূলত এই দুই কারণেই হিংসায় প্ররোচনা মেলেনি বলে আইন-শৃঙ্খলারও উন্নতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, এতকিছুর মধ্যেও স্থানীয় যুবকদের জঙ্গিদের প্রতি আনুগত্য নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। চলতি বছর জানুয়ারির শুরুর দিকে ৮০ জন যুবক জঙ্গি দলে নাম লেখায়, এর মধ্যে ৩৮ জনকে হত্যা করা হয় ও ২২ জন ধৃত। এখনও পর্যন্ত এই বছরে ৪১টি অভিযানে ১৫০ জঙ্গি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। গত বছর ৫ই অগাস্টের পর থেকে এই সংখ্যাটা ১৭৬।
পুলিশের দাবি অনুসারে জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় ১৯০ জঙ্গি সক্রিয়, এর মধ্যে ১০০ জন দেশী। স্থানীয় যুবকদের দলের নেওয়ার পর পরই নাশকতার অগ্রভাগে রাখা হয়। আর এতেই বেশি প্রাণ যায় স্থানীয় জঙ্গিদের, যাদের বয়স নেহাতই কম। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, 'এইসব জঙ্গিদের দেখা মাত্রই এনকাউন্টার করা উচিত বলে অনেকের মত, আবার একাংশ মনে করে যে, স্থানীয় যারা জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে তাদের বুঝিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো উচিত। এই কাজ নিরাপত্তা বাহিনীকেই করতে হবে।' এইসব জঙ্গিদের মেরে ফেলে আদৌ সমস্যা নিবারণের লক্ষ্যে গভীরে পৌঁছানো যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তবে, গত কয়েক মাসে জম্মু-কাশ্মীরে অভিযান বাড়িয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে সাফল্যও মিলছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন