পুঞ্চ হামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনাদের হাতে আটক তিন জনের মৃত্যু তুলেছে একাধিক প্রশ্ন। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয়েছে খোদ রাজনাথ সিংকে। স্বজনহারা পরিবারের এখন একটাই প্রশ্ন, “কেন ওরা এভাবে শাস্তি দিল?”, “আমার ছেলেকে এখন কে ফিরিয়ে দেবে”, “নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের কিভাবে বিশ্বাস করব?”
জম্মুতে ঘন জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত টোপা পীর গ্রামে বাস মাত্র ৩০টি পরিবারের। ২২ শে ডিসেম্বর জঙ্গি হামলায় চার সেনার মৃত্যুর পর গ্রামেরই ৯ জন আটক করে জেরা করে সেনা বাহিনীর সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা তিনজনকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে সেনা কর্মীদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহম্মদ শওকতের (২৬) বাবা নাজির হুসেন (৬০) বলেন, “যদি তাদের মেরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল তাহলে তাদের গুলিতে ঝাঁঝরা করতে পারত সেনা কর্মীরা। এত অত্যাচারের পর কেন তাদের হত্যা করা হল" এই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা এই মামলায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার একদিন পরে, পরিবারগুলিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যিনি তাদের ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
পরিবারগুলি স্মরণ করে ২২ ডিসেম্বর, "প্রায় ১২ জন সেনা সদস্য, কেউ সাধারণ পোশাকে, কেউ কেউ ইউনিফর্ম পরা" কীভাবে নয়জনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। সাফির, শাবির এবং শওকত মারা গেলেও রিয়াজ বর্তমানে জেলার অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
ওই দিন মোট নয়জনক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক, ছিলেন লাল হুসেন। যার বয়স ৮৫। সর্বকনিষ্ঠ ১৫ বছরের এক কিশোর। পরিবারগুলি অনুমান রুটিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সকলকেই কয়েক ঘন্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। “সেদিন ফিরে এসে লাল হুসেন বলেছিলেন যে আমাদের ক্যাম্পে যেতে হবে এবং আমাদের বাচ্চাদের বাঁচাতে হবে,”। একথা শুনেই বাকীদের পরিবার পরিজনরা ছুটে যায় নিকটতম সেনা ক্যাম্পে। লাল হুসেন গ্রামবাসীদের কাছে তার প্রত্যক্ষ নির্যাতনের দৃশ্য বর্ণনা করেছিলেন।”
ভাই নুর আহমেদ পরের দিন যে অবস্থায় দাদার দেহ দেখতে পান তা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। “সেফিরের মাথায় কাটা দাগ ছিল, তার বাহুতে এবং তার পুরো পিঠে পোড়া দাগ ছিল এবং এমনকি তার চোখও ফুলে গিয়েছিল,” । তিনি বলেন, 'তিনি সাফীরের সন্তানদের তাদের বাবার দেহ দেখতে দেননি। "আমি তাদের কেবল তার মুখ দেখতে দিয়েছিলাম এবং আমরা তাকে বাড়ির পিছনের জমিতে তাঁকে কবর দিয়েছিলাম।"
প্রশাসন প্রতিটি পরিবারের জন্য ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, একটি জমি এবং মৃতের নিকট আত্মীয়দের জন্য সরকারি চাকরি ঘোষণা করেছে। সাফীরের মা অবশ্য সেনার এই ক্ষতিপূরণের আশ্বাস প্রসঙ্গে বলেছেন, কেউ কি আমার সন্তানের জীবনের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে?” তিনি বলেন, “আমি এখন নিজের এবং আমার অন্য ছেলের জন্যও ভয় পাচ্ছি। আমি কিভাবে তাদের আর বিশ্বাস করব?"