জম্মু-কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্তকে ভর্ৎসনা করল সুপ্রিম কোর্ট। ইন্টারনেট-সহ জম্মু-কাশ্মীরে আরোপিত যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করে জনসমক্ষে তা তুলেধরতে প্রশাসনকে এক সপ্তাহ সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট। ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবার উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে এবং ১৪৪ ধারার প্রয়োগে অবিমিশ্রকারিতার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। অভূতপূর্ব পরিস্থিতি ছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য উপত্যাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা টেলিকম আইনের বিধি লঙ্ঘন ও প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতার প্রকাশ বলে এদিন জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অবিলম্বে হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার জন্য এদিন জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
এছাড়াও এদিনের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে ১৪৪ ধারা লাগু করা যায় না। এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা যেতে পারে যখন হিংসা ও জনগণের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিপদ রয়েছে। ইন্টারনেট এই মুহূর্তে যোগাযোগ স্থাপনে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা নেয়। ভারতীয় সংবিধানের ১৯/ (১)/(এ) ধারা অনুযায়ী, এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা মানুষের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে। সাময়িকভাবে এর ব্যবহার বন্ধ করা যায়, কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য যায় না। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় ইন্টারনেটের অপব্যবহারের সুযোগ সবচেয়ে কম। তার উপর ভরসা রেখে এসব জায়গায় ইন্টারনেট যোগাযোগ চালু করতে হবে।
আরও পড়ুন: জম্মু কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ, ১৪৪ ধারা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের আসল কথা
এদিনের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই টুইট করেন কংগ্রেস মুখপাত্র রনদীপ সিং সুরজওয়ালা। তিনি লেখেন, 'মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি এদিনের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের অসন্তোষের প্রকাশ। কোর্ট মনে করিয়ে দিয়েছে যে কোন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়। বন্ধ খামে এবার আর সত্য লুকানোর কোনও জায়গা নেই।'
SC recorded displeasure at Modi Govts refusal to show its orders and reminded them that internet ban is extraordinary measure.
Modi-Shah now have a week to review Internet restrictions and place the reasons before the public.
No more ‘sealed envelopes’ to hide the truth in! pic.twitter.com/BchC4kcYf7
— Randeep Singh Surjewala (@rssurjewala) January 10, 2020
উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। এরপর থেকেই সেখানে জারি রয়েছে বিবিধ নিষেধাজ্ঞা। রাজ্যের তকমা হারিয়ে জম্মু-কাশ্মীর বর্তমানে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেই। তবে, নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ ও কাশ্মীর টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর অরুরাধা ভাসিন। কাশ্মীর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সেই সব গুচ্ছ মামলার শুনানিতেই এদিন এই নির্দেশ দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল, ১০ টি বিষয় যা আপনার জানা জরুরি
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এনভি রামানা, বিচারপতি সুভাষ রেড্ডি ও বিআর গাভাইয়ের বেঞ্চ গত ২৭ ডিসেম্বরর এই মামলার রায় সংরক্ষিত রেখেছিলেন। আবেদকারীদের যুক্তি ছিল, নিষেধাজ্ঞার ফলে উপত্যকার জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার হাল করুণ। ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় আবেদনে।
ভূস্বর্গে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ রোধ ও সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সাময়িকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা বলে দাবি করে কেন্দ্রর মোদী সরকার। আইন মেনেই সব করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছিল কেন্দ্র। ৫ আগস্টের পর সরকারি পদক্ষেরপের ফলে কাশ্মীরে কোনও প্রাণহানি হয়নি বলেও জানায় কেন্দ্র। কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলার আগের শুনানিতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছিল প্রশাসন। ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা জানিয়েছিলেন, কাশ্মীর নিয়ে যা বোঝানো হবে তাই মেনে নেওয়া হবে এমনটা হবে না। নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশের ফাইলও দেখতে চেয়েছিলেন বিচারপতিরা।
Read the full story in English