গোটা একটা দিন নীরব থাকার পর অবশেষে রবিবার মুখ খুলল জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। স্বীকার করল যে শীর্ষ হিজবুল মুজাহিদিন নেতা সৈয়দ নভীদ মুশতাক এবং তার সহযোগীদের সঙ্গে একটি প্রাইভেট গাড়িতে শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কের একটি চেকপোস্ট থেকে গ্রেফতার হয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক সম্মানিত অফিসার, যিনি শ্রীনগর বিমানবন্দরে হাইজ্যাকিং প্রতিরোধ শাখায় কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে দিল্লিতে সংসদ ভবনে হামলার ঘটনাতেও জড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম।
গ্রেফতার হওয়া অফিসার হলেন ডেপুটি সুপারিনটেন্ডন্ট দভিন্দর সিং, যিনি গত বছর বীরত্বের জন্য রাষ্ট্রপতি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ১৫ জন বিদেশী কূটনীতিকদের যে দলটি দুদিনের জম্মু ও কাশ্মীর সফরে শ্রীনগর বিমানবন্দরে পৌঁছন, অন্যান্যদের সঙ্গে তাঁদের স্বাগত জানান সিংও।
মুশতাক এবং সিং ছাড়াও ওই গাড়িতে ছিল শোপিয়ান জেলার বাতপোরার বাসিন্দা রফি রাদার, যে গত বছরের জুলাই মাসে সন্ত্রাসীদের দলে যোগ দেয়, এবং শোপিয়ানেরই দিযারুর বাসিন্দা তথা উকিল ইরফান শফি। বলা হয়েছে, কুলগাম জেলার ওয়ানপোতে যখন গাড়িটি থামানো হয়, তখন চালকের আসনে ছিল শফি। চারজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
কে এই ডিএসপি দভিন্দর সিং?
তার উকিলকে ২০০৪ সালে তিহার জেল থেকে লেখা এক চিঠিতে সন্ত্রাসের অভিযোগে কারাবন্দি আফজল গুরু জানায়, "ডিএসপি দভিন্দর সিং", যিনি সেসময় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশনস গ্রুপের সঙ্গে হুমহামায় মোতায়েন ছিলেন, আফজলকে বলেন যেন সে "মহম্মদকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লি যায়, তার থাকার জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেয়, এবং তাকে গাড়ি কিনে দেয়"। সন্ত্রাসের অভিযোগে আফজল গুরুর ফাঁসি হয় ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে। উল্লেখ্য, যে মহম্মদের কথা বলা হয়েছে, সে পাকিস্তানি নাগরিক, যাকে সংসদ ভবনের হামলাকারীদের একজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু সংসদের ওপর হামলার ঘটনায় দভিন্দর সিংয়ের ভূমিকা নিয়ে কোনোরকম তদন্ত হয়নি। রবিবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইন্সপেক্টর জেনারেল (কাশ্মীর) বিজয় কুমার বলেন: "এ ব্যাপারে আমাদের নথিপত্রে কিছু নেই, আমি নিজেও এই সম্পর্কে কিছু জানি না...আমরা এ ব্যাপারে ওঁকে জিজ্ঞেস করব।"
ডেপুটি সুপারকে চিহ্নিত করে রবিবার কুমার বলেন, "আপনারা জানেন, উনি (সিং) একজন সিনিয়র অফিসার। জম্মু ও কাশ্মীরে অজস্র সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের সদস্য ছিলেন। কিন্তু যেভাবে গতকাল উনি ধরা পড়েন... জম্মুর দিকে যাওয়ার একটি গাড়িতে দু-তিনজন জঙ্গির সঙ্গে... তা জঘন্য অপরাধ। সেই কারণেই ওঁকেও আমরা জঙ্গি হিসেবেই দেখছি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, বর্তমানে রিম্যান্ডে রয়েছেন উনি।"
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক পদস্থ পুলিশ আধিকারিক বলেন, সন্ত্রাস দমন অভিযানে কাশ্মীরে সব এলাকায় কাজ করেছেন সিং। এই আধিকারিকের কথায়, "পুলওয়ামাতেও ডেপুটি এসপি ডিআর ছিলেন সিং। উনি মুখ খুললে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোতে পারে।"
সূত্রের খবর, চেকপোস্টে যখন গাড়ি আটক করা হয়, তখন সামনের আসনে শফির পাশে বসে ছিলেন সিং। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চেকপোস্টে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (দক্ষিণ কাশ্মীর) অতুল গোয়েল। "ডেপুটি সুপারকে দেখে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ডিআইজি। সবাইকে পুলিশের গাড়িতে তুলে কুলগামে জয়েন্ট ইন্টেরোগেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়," জানিয়েছে এক সূত্র।
এক শীর্ষ পুলিশকর্তার দাবি, কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে। "পুলিশ তাদের আটকালে তারা পালানোর চেষ্টা করে নি।"
আইজিপি কুমারের বক্তব্য অনুযায়ী, নভীদ মুশতাক হলো উপত্যকায় হিজবুল মুজাহিদিনের অপারেশনাল চিফ রিয়াজ নাইকুর প্রধান সহকারী। এর আগে ২০১৭ সালে বদগাম থেকে চারটি রাইফেল চুরি করে পালায় মুশতাক। কুমার জানান, "বেশ কিছু সাধারণ নাগরিক, পুলিশ, এবং ট্রাক চালকের হত্যায় জড়িত রয়েছে মুশতাক। আজ পর্যন্ত ওর নামে ১৭টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আমাদের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকায় ছিল সে। শোপিয়ানের হিজবুল জেলা প্রধানও ছিল।"