দৃশ্য এক
কাঁচের আলমারিটায় বিদ্যুতের গতিতে ছুটে এল বুলেট। মুহূর্তে গুঁড়িয়ে গেল কাঁচ। রান্নাঘরে লুটিয়ে পড়েছেন ইন্সপেক্টর মহম্মদ আশরাফ দর। শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে বেরনো রক্তে ধুয়ে গেল মেয়ের জামাটা। পাশের ঘরে দুই ভাই খেলতে খেলতে তখন থমকে গেছে গুলির শব্দে।
দৃশ্য দুই
সকাল সাড়ে আটটা। ঈদের সকালে বছর তিনেকের সুহানাকে নিয়ে ওরই জন্য উপহার কিনতে বেরিয়েছেন ফইয়জ আহমেদ খান। জাজরিপোরা কুলগামের বাজারে এক দোকানে ঢোকা মাত্র চোখ মুখ ঢাকা তিন ব্যক্তি এসে তৎক্ষণাৎ গাড়িতে উঠতে বলে। ৩৪ বছর বয়সি আহমেদ পেশায় পুলিশের কনস্টেবল। ভিড়ের মধ্যে জামাইবাবুকে দেখতে পেয়ে ছোট্ট সুহানাকে কোনোরকমে ঠেলে দেয় তাঁর কাছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, গাড়িতে ওঠার আগেই বুলেট এসে ঝাঁঝরা করে দেয় শরীরটা।
দৃশ্য তিন
ঈদের চাঁদে চোখ রাখার সময় হচ্ছে তখন, বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। তৈরি হয়ে কাজে বেরোবেন মহম্মদ ইয়াকুব শাহ। হাতে থাকা টিফিন বাক্সে রাতের খাবার। রাত কাটাতে হবে পুলিশ লাইনে। না, রাত কাটেনি। ভোরও হয়নি। আর কোনও ভোর দেখা হবে না ইয়াকুবের। একটা বুলেটে চুকে বুকে গেছে জীবনের সব হিসেব।
অনুরাগ কাশ্যপের পরের ছবির চিত্রনাট্য থেকে নেওয়া নয় ওপরের দৃশ্য গুলো। বুধবার, ঈদের দিনে এমন বীভৎসতার সাক্ষী থেকেছে জম্মু কাশ্মীর। ইয়াকুব, আহমেদ, ফইয়জদের কারোর বাড়িতে রয়েছে ছোট ছেলে, কারোর মেয়ে, মা, স্ত্রী, কারোর বা ব্যাঙ্ক বোঝাই ঋণ। এদের মধ্যে মিল একটাই। তিনজনেই জম্মু কাশ্মীর পুলিশের কর্মী। ওঁদের কারোর স্ত্রী এখন শোকে মুহ্যমান, কারোর মেয়ে আতঙ্কে ঘরে ফিরছে না। পরিবারগুলোকে একটা সুতোয় বেধে রেখেছে একটাই ঘটনা। ওঁদের কাছের মানুষগুলো আর ফিরবেন না কোনোদিন।
সম্ভাব্য জঙ্গিহানা বলেই ঘটনাগুলিকে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। সরকারি হিসেব বলছে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৪জন পুলিশের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গির সংখ্যা ১২৬।