দু'টি ক্রিকেট ম্যাচ। প্রথমটিতে খেলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত সোরেন ও বিধায়য়করা, দ্বিতীয়টি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিধায়করা। আর এতেই খরচ হয়েছে ৪২ লাখ। করোনাকালে ধুঁকছে অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছর মার্চ মাসের এই দুই ক্রিকেট ম্যাচের খরচের বহরে ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তথ্যের অধিকার (আরটিআই) আইনের অধীনে পর্যটন, শিল্প, সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং যুব বিষয়ক বিভাগ থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে যে, এই বিল এখনও 'প্রক্রিয়াধীন' অবস্থায় রয়েছে। একজন সিনিয়র সরকারি আধিকারিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন যে, বিলটিতে আগে দু'বার অনুমোদন মেলেনি। একবার বিভাগীয় স্তরে এবং তারপরে ক্যাবিনেটে।
আরটিআই তথ্য অনুযায়ী, ওই দুই ম্যাচের ট্র্যাকশ্যুট, ব্যাগ, মোজা, জুতো, টুপি বাবদ খরচ হয়েছে ৩৩ লক্ষ। দুটিই টেনিস বলে খেলা হয়েছিল। ফলে সেখানে প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট সহ সুরক্ষার অন্যান্য সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে না।
সরকারি আধিকারিকদের কথায়, খেলার সামগ্রী ৮২ জন বিধায়ক, বিধানসভার আধিকারিক ও কর্মী, সংবাদ মাধ্যমের কর্মী সহ ১০০ জনের বেশিকে বিলি করা হয়েছিল। তবে, মাঠে মেনেছিলেন মাত্রা ৩৩ জন।
খেলার সামগ্রী কেনার বিষয়টি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়নি বলেও দাবি ওই সরকারি আধিকারিকের।
ঝাড়খণ্ডের ক্রীড়া মন্ত্রী হাফিজুল হাসান খরচের প্রস্তাবে সাক্ষর করেছিলেন ও তারপর অনুমোদনের জন্য ক্যাবিনেটে পাঠানো হয়। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস মধুপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী এই প্রসঙ্গে হাফিজুল হাসানের সহ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'এই নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।' রাজ্যের ক্রীড়া সচিব অমিতাভ কুশলও এনিয়ে উত্তর দেওয়ার জন্য ছিলেন না। সরকারি আধিকারিকরা বলেছেন, 'নতুন ঘটনা নয়, এই ধরণের ম্যাচ প্রতি বছরই খেলা হয়ে থাকে।'
কংগ্রেস বিধায়ক প্রদীপ যাদব, যিনি মার্চ মাসের মুখ্যমন্ত্রী বনাম বিধায়কদের ম্যাচে উপস্তিত ছিলেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'খেলাকে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। এছাড়া ম্যাচের ফলে মেলামেশাও বাড়ে। অতি উচ্চ মানের সামগ্রী পেয়েছিষ আমি এখনও ওখান থেকে পাওয়া জুতো ব্যবহার করি। তবে কত খরচ হয়েছে তা জানি না।' উল্লেখ্য, ঝাড়খণ্ডে জেএমএম-য়ের জোট সঙ্গী কংগ্রেস, রয়েছে আরজেডি-ও। এই তিন দলের জোটে সরকারও চলছে।
তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ম্যাচটি ১৮ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী বনাম স্পিকার একাদশের হয়েছিল। জিতেছিল স্পিকার একাদশ। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত সোরেন করেছিলেন ১১ রান। তাঁকেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়।
ঝাড়খণ্ড স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশ স্টেডিয়ামের এই ম্যাচে টিশার্ট, মোজা, জুতো সহ খরচ হয়েছে ২৩.৯৯ লাখ টাকা। রাতের খাবারের জন্য ৩.১৭ লাখ ও আলো বাবদ খরচ হয়েছে ১.২৯ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় ম্যাচটি হয় ২২ মার্চ বিরসা মুণ্ডা অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে। মুখ্যমন্ত্রী একাদশের সঙ্গে খেলা হয়েছিল সংবাদ মাধ্যম একাদশের। এতে খরচ হয় ১১.৩৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ট্র্যাকশ্যুট, জুতো, মোজা. টুপি সহ খরচ হয়েছে ৯.৩৭ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য সরকারের এক কর্মী জানিয়েছেন, সরকারি কোষাগার থেকে দেড় লক্ষ টাকার বেশি অর্থ খরচ হলেই ক্যাবিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
খেলার সামগ্রী পেয়েছিলেন বাগোদার সিপিআই (এম-এল) বিধায়ক বিনোদ সিং। তিনি বলেছেন, 'আমি খেলা দেখতে অল্প সময়ের জন্য মাঠে গিয়েছিলাম। আমার সহয়োগী একটি ব্যাগ পেয়েছিলেন। সেখানে ট্র্যাকশ্যুট, জুতো, মোজা, টুপি ছিল। আমি না চাইতেই সেটি আমার সহযোগীর হাতে দেওয়া হয়। আমার সহয়োগীই সেটি নিয়েছিল। তবে, এই ধরণের খেলার জন্য এত বিপুল অর্থ খরচের প্রয়োজন ছিল না। এই অর্থে পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজ করা যেত।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন