Advertisment

তবরেজ আনসারি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কারা?

গ্রামবাসী এবং গ্রেফতার হওয়া ১১ জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন ক্লাস টেনের গণ্ডি পেরিয়েছেন, এবং অধিকাংশই হয় দিনমজুর নাহয় বেকার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
jharkhand lynching

মৃত্যুর আগে তবরেজ আনসারি

দিনমজুর থেকে শুরু করে কাজের খোঁজে কিছু বেকার, রেলওয়ে গ্যাংম্যান থেকে শুরু করে কৃষক। ২২ জুন ঝাড়খণ্ডে তবরেজ আনসারির গণপ্রহারে মৃত্যুর ঘটনায় এঁরা রয়েছেন গ্রেফতারি তালিকায়। সবশুদ্ধ এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জন কে।

Advertisment

ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৮ জুন, যেদিন ঝাড়খণ্ডের ধাতকিডি গ্রামের কিছু বাসিন্দা একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারেন আনসারিকে, এবং তাঁকে 'জয় শ্রীরাম' ও 'জয় হনুমান' বলতে বাধ্য করা হয় বলে খবরে প্রকাশ। এই ঘটনার পর আনসারিকে চুরির দায়ে গ্রেফতার করে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়, কিন্তু গণপ্রহারে পাওয়া আঘাতের কারণে চারদিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।

২৩ জুন ধাতকিডি গ্রামের ১১ জন বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে পুলিশ, এবং বরখাস্ত হন দুজন পুলিশকর্মী। গ্রামবাসী এবং গ্রেফতার হওয়া ১১ জনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে মাত্র পাঁচজন ক্লাস টেনের গণ্ডি পেরিয়েছেন, এবং অধিকাংশই হয় দিনমজুর বা বেকারত্ব ঘোচাতে চাকরির সন্ধানে। অভিযুক্তরা হলেন:

প্রকাশ ওরফে পাপ্পু মণ্ডল, ২৮: প্রথম গ্রেফতার হন ইনিই। এঁর ফেসবুক প্রোফাইলে গেলে দেখা যায়, বিজেপির উত্তরীয় গায়ে জড়িয়ে তাঁর ছবি, আবার ধাতকিডির বাসিন্দারা বলছেন তিনি "অর্জুন মুন্ডার দলের" হয়ে কাজ করতেন। সরাইকেলা জেলার এসপি কার্তিক এস জানিয়েছেন, "গ্রেফতার হওয়া কোনও অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনোরকম রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।"

কমল মাহতো, ৪৮: আনসারির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়া মাহতোর মেয়ে মনিকা বর্তমানে স্নাতক স্তরের ছাত্রী। মনিকা বলছেন, "মুরুপে রেলওয়ে গ্যাংম্যানের কাজ করেন বাবা। এখন গোটা গ্রাম আমাদের দোষ দেখছে। আমরা তো স্রেফ চোর এসেছে দেখে চেঁচামেচি করি।" গ্রামে যে কতিপয় পাকা বাড়ি আছে, সেগুলির একটি কমলের।

আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডের ‘খুন’ মানবতার কলঙ্ক: সৌগত রায়

সুমন্ত মাহতো, ২৪: কমল মাহতোর পুত্র সুমন্তই প্রথম "চোর" দেখে চেঁচামেচি শুরু করেন। অবিবাহিত সুমন্ত গত বছর বাঘবেরা থেকে আইটিআই-এর কোর্স করেন, এবং একটি ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থায় হালে শিক্ষানবিশি শেষ করেছেন। তাঁর বোন মনিকার দাবি, সবে পাকাপাকি চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল সুমন্তের।

প্রেমচাঁদ মাহলি, ২১: পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন মাহলি। গ্রামবাসীদের খবর, ক্লাস তেঁ পাস করেছেন ইনিও, এবং সিমেন্টের কারখানায় মজুরের কাজ করতেন। তাঁর বাবা-মা বাঁশের ঝুড়ি বানিয়ে কাছের একটি বাজারে বিক্রি করেন।

সোনারাম মাহলি, ৩১: সম্পর্কে প্রেমচাঁদের তুতো ভাই, দিনমজুরের কাজ করেন সোনারাম। তাঁর প্রতিবেশী জয়ন্তীর দাবি, "ক্লাস টেন পাশ নয়" সোনারাম। জয়ন্তীর আরও দাবি, সোনারাম কাজের খোঁজে গ্রামের বাইরে থাকায় তাঁর ৬৫ বছর বয়সী বাবা কুশল মাহলিকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সরাইকেলার এসপি বলছেন এ বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি। "আমি জানতাম না ওঁর বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা দেখতে হবে," বলেন তিনি।

সত্যনারায়ণ নায়ক, ৫৫: রং মিস্ত্রির কাজ করে দৈনিক আয় ১০০-১৫০ টাকা, কাঁচা বাড়িতে বসবাস। সত্যনারায়ণের পরিবার জানিয়েছেন, ক্লাস ফাইভের পর আর পড়াশোনা হয় নি তাঁর। তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী বলেন, তাঁদের মেয়ের সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে। "আমার স্বামীর রোজগারের টাকা থেকেই আমাদের নাতির দেখাশোনা করছিলাম। এখন আর কেউ রইল না। ১৮ জুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কাউকে মারেন নি আমার স্বামী।"

মদন নায়ক, ৩০: সত্যনারায়ণের ভাইপো, মদনের পড়াশোনাও ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনিও সিমেন্ট কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর ছেলে প্রকাশের কথায়, বাবার কাছে "গেট পাস" ছিল না বলে কিছুদিন যাবত কাজে যাচ্ছিলেন না তিনি। "বাবা ঘটনার সময় সেখানে ছিল, কিন্তু কাউকে আক্রমণ করে নি," বলে প্রকাশ।

ভীম মণ্ডল, ৪৫: স্থানীয় বাজারগুলিতে "আলু প্যাটি আর পকোড়া" বেচা ভীমেরও লেখাপড়া ক্লাস ফাইভ পর্যন্তই। তাঁর স্ত্রী নন্দিনী জানান, "আমরা ভোর পাঁচটায় উঠে ঘটনার কথা জানতে পারি। তারপর দেখতে গিয়েছিলেন উনি।"

মহেশ মাহলি, ২৮: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশের মায়ের কথায়, ক্লাস টেন পাশ মহেশ। "একটা কোর্স করতে রাঁচি যায় ও, ওখানে কাজও করে, কিন্তু বাড়ি ফিরেছিল কিছুদিনের জন্য। পুরো পরিবারের দায় ওর ওপর। ১৮ জুন স্রেফ দেখতে গিয়েছিল কী হচ্ছে," বলেন তিনি।

সোনামু প্রধান, ২৩: ১৮ জুনের গণপ্রহারের ঘটনার পর থেকে দেখা যায় নি তাঁর পরিবারকে। গ্রামবাসীরা বলছেন, ক্লাস টেন পাশ সোনামু অবিবাহিত। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, জমি চাষ করতে সম্প্রতি ট্র্যাক্টর কেনেন সোনামু, সঙ্গে একটি "সেকেন্ড হ্যান্ড বোলেরো"।

চামু নায়ক, ৪০: অল্পস্বল্প চাষের জমির মালিক চামুর তিন ছেলে। তাঁর স্ত্রী সারথি দেবী জানাচ্ছেন, ক্লাস টেন শেষ করেন নি চামু। "উনি তো ঘটনার সময় উপস্থিতই ছিলেন না। কাউকে মারেন নি," বলেন তিনি।

Advertisment