/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/04/jharkhand-lynching-759.jpg)
নিহত প্রকাশের স্ত্রী জেরমিন
ঝাড়খণ্ডের ঝুরমো গ্রাম। সেখানে ২০ বছরের একটি ষাঁড়ের মৃত্যুর খবর গ্রামবাসীকে দেয় আদ্রনিশ কুজুর। জনা ৩৫ গ্রামবাসী আসে ষাঁড়টিকে কবর দিতে। মিনিট খানেকের মধ্যেই উত্তেজিত জনতার একাংশ হাতে রড, আর লাঠি হাতে গ্রামবাসীর ওপর হামলা করে। তাঁদের দাবি, এটি গো হত্যার ঘটনা। হামলায় প্রাণ হারালেন প্রকাশ লাখরা। আহত আরও তিন।
বুধবারের ঘটনা। ঘটনার পর দিন দুয়েক কেটে গেলেও আতঙ্কের পরিবেশ কাটেনি ঝুরমো গ্রামে। শুক্রবার আহত তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঝাড়খণ্ড হাসপাতালে আপাতত তাদের চিকিৎসা চলছে। প্রকাশের হত্যার সঙ্গে নাম জরিয়েছে, এমন সাতজনের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে গুমলার গ্রামে চার জন দলিত গোষ্ঠীর মানুষ একটি মৃত ষাঁড়ের মাংস কাটছিলেন। তখনই সংলগ্ন জয়রাগি গ্রাম থেকে কয়েক জন এসে তাঁদের বাধা দেন। শুরু হয় বচসা, হাতাহাতি।
জয়রাগি গ্রামের মানুষদের হাতে প্রবল গণপিটুনি খান ও চার জন। এরা প্রত্যেকেই আদিবাসী খ্রিস্টান। মারের চোটে প্রাণ হারান এক জন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর নাম প্রকাশ লাখরা।
আরও পড়ুন, ‘চড় মারলে গাল পেতে দিন’! অনুব্রত কি বদলে গেলেন?
আহতরা হলেন পিটার ফুলজন্স (৫০), বেলাসুস তিরকে (৬০), জনরিউশ মিঞ্জ (৪০)। বর্তমানে রাঁচির রাজেন্দ্র ইন্সটিটিউট অব মেডিকাল সায়েন্সেসে ভর্তি রয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ রোশান খালখো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, "এদের প্রত্যেকেরই হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। হাতে, কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে তাদের"।
ঝাড়খণ্ড পুলিশ জানিয়েছে, "ঝাড়খণ্ড গো হত্যা বিরোধী আইনের আওতায় আমরা তিনজন আহত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছি"।
ঘটনার পর বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছে না ঝুরমো গ্রাম। শুক্রবার সার্কেল অফিসার জুনিকা শর্মা গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বলেন, "ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গ্রেফতার করা হয়েছে। কাল রামনবমী, তার আগে কারোর গ্রেফতার হওয়া কারোর নাম জানাচ্ছি না"।
নিহত প্রকাশের স্ত্রী জেরমিনের আক্ষেপ, বুধবার ঘর ছাড়ার আগে শেষবার কথা বলা হয়নি তাঁর। বললেন, "শেষ ৪০ বছরে আমি শুনিনি মৃত পশুর মাংস খাওয়ার জন্য কাউকে খুন করে ফেলা হয়েছে। পশুটি আগে থেকেই মৃত ছিল। খাবারের জন্য কেউ মারেনি"।
আরও পড়ুন, ‘স্নাতকোত্তর না করেই এম ফিল করেছেন রাহুল’, কীভাবে সম্ভব?
প্রকাশ লাখরার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। এসপি গুমলা অঞ্জনি কুমার জানিয়েছেন, "সাতজনের মধ্যে জীবন আর সঞ্জয় সাহুকে গ্রেফতার করেছি আমরা। দু'জনের বিরুদ্ধে আগেও খুনের অভিযোগ ছিল"।
তবে বিষয়টি শুধুই গো হত্যা সন্দেহে হত্যার ঘটনা, কি না, খতিয়ে দেখতে পুলিশ। আদিবাসীদের ওপর অকারণ অত্যাচারের বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
Read the full story in English