খাগড়াগড় ও বুদ্ধগয়া বিষ্ফোরণের অন্য়তম মাস্টার মাইন্ড জেএমবি জঙ্গি আব্দুল করিম পুলিশের জালে ধরা পড়ল। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ও মুর্শিদাবাদ পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই দুই বিষ্ফোরণের অন্যতম কিংপিন জেএমবি’র প্রধান সালাউদ্দিন সালাহিনের ঘনিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের কার্যত সেকেন্ড ইন চিফ আবদুল করিমকে গ্রেফতার করেছে। মুর্শিদাবাদের সুতির কাশিমনগর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাত দুটো নাগাদ তার আত্মীয় ছোট মাসির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই জেএমবি সদস্য়কে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিষ্ফোরণের পর থেকেই হন্য়ে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে জামাত উল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি-র অন্যতম পাণ্ডা আবদুল করিম ওরফে বড় করিমকে গ্রেপ্তার করার জন্য জাল বিস্তার করছিল এস টি এফ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স কলকাতা থেকে এসে রাতভর অভিযান চালিয়ে তার আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকা ওই কুখ্যাত জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করে।
বর্ধমান খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের পিছনে ছিল জেএমবি। তখনও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গার নাম উঠে এসেছিল। জেএমবির স্লিপার সেল বর্ধমানে ঘাঁটি বানিয়েছিল। বিহারের বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গেও যুক্ত সংগঠনের একাধিক সদস্য এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছে মুর্শিদাবাদ থেকে। সেক্ষেত্রে জেএমবি’র প্রধান সালাউদ্দিন সালাহিনের ঘনিষ্ঠ এই আবদুল করিম মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান মডিউলের দায়িত্বে ছিল বলেই জানা যাচ্ছে। সূত্রের খবর, তাঁকে জেরা করে সালাউদ্দিনের নাগাল পাওয়া এবার অনেক সহজ হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ধৃতের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি, কাগজপত্র মিলেছে।
মুর্শিদাবাদ সীমান্তে জেএমবি জঙ্গিরা নতুনভাবে কোনও নাশকতার ছক কষছে কি না, সেদিকে নজর রয়েছে গোয়েন্দাদের। সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা জানতে পারে রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কয়েকটি জায়গায় ফের কার্যকলাপ শুরু করেছে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের দু’একটি জায়গায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় ফের নতুন করে গোপনে প্রশিক্ষণ শিবির শুরু করেছে জেএমবি।
এদিকে আব্দুল করিম গ্রেপ্তার হতেই তার সামশেরগঞ্জ এর চাঁদনিদহ এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দেয় প্রতিবেশীদের মধ্যে। স্থানীয়রা জানান, নবম শ্রেণী উত্তীর্ণ ধৃত এই জঙ্গি নেতা শুরুতে কখনও ইট ভাটার ব্যবসা, কখনও গ্রিলের ব্যবসার আড়ালে জঙ্গি কার্যকলাপে হাত পাকাতে শুরু করে। এইভাবে কয়েক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে খাগড়াগড় ও বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ কাণ্ডে তার নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আব্দুল করিম। সূত্র মারফত জানা যায়, সম্প্রতি জেএমবি নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য করিম ভিন রাজ্যে কেরল, তামিলনাড়ুতে পরিযায়ী শ্রমিকের ভেক ধরে নিজের কাজ চালাতে থাকে। ইদানিং করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় ভিন রাজ্য থেকে মুর্শিদাবাদে প্রথমে নিজের বাড়ি, পরবর্তীতে সেখান থেকে মাসির বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকে সে। এই ভাবেই এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে অন্য আত্মীয় বাড়িতে দফায় দফায় ডেরা বদল করছিল করিম। অবশেষে শেষ রক্ষা হয়নি এই জঙ্গী নেতার।