Advertisment

'অসম্মানিত' রোমিলা থাপার, ঐতিহাসিকের বায়োডেটা চাইল জেএনইউ

"পৃথিবীর যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই সম্মান প্রাপককে একবার এমিরিটাস স্বীকৃতি দিয়ে দিলে তা আর পুনর্মূল্যায়ন করে না। জেএনইউয়ের চিঠিতে বলাই ছিল যে এই পদটি সম্মানজনক পদ এবং সারা জীবনের জন্য...।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

জেএনইউর চিঠিতে 'অসম্মানিত' হলেন রোমিলা থাপার। (ফাইল চিত্র)

বরেণ্য ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার মনে করছেন, তাঁকে অসম্মানিত করতেই 'এমিরেটা অধ্যাপিকা' পদে তাঁর যোগ্যতা পুনর্মূল্যায়ন করবে বলে বায়োডাটা চেয়েছে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)। জেএনইউ-এর বেশকিছু 'গুরুত্বপূর্ণ' প্রশাসনিক পরিবর্তনে তিনি সরব  হয়েছিলেন বলেই তাঁকে এমন 'অসম্মান' করা হচ্ছে বলে মনে করছেন এই প্রবীণ ঐতিহাসিক। শনিবার ইপিডব্লু (EPW) ম্যাগাজিনকে জেএনইউ-এর আরেক এমিরেটাস অধ্যাপক প্রভাত পটনায়েক জানান, "বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিযুক্ত এক কমিটি তাঁর কাজের মূল্যায়ন করতে পারে এবং তাঁকে এই পদে কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে"। এদিকে, রোমিলা থাপারও জানান যে এই চিঠিটি তিনি জুলাই মাসের ১২ তারিখ হাতে পেয়েছেন।

Advertisment

আরও পড়ুন- এনআরসি ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’, তবুও ‘কড়া নজর’ রাখছে বাংলাদেশ

উল্লেখ্য, গত বছরের অগাস্ট মাসে জেএনইউ-এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন সংশোধন করে। এতেই ঠিক হয়, পঁচাত্তরোর্ধ্ব এমিরিটাস/এমিরিটা অধ্যাপকদের কাজের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করতে কাউন্সিল কর্তৃক কমিটি নিযুক্ত হবে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, নয়া বিধিতেই রোমিলা থাপারকে এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে জেএনইউ থেকে অবসর গ্রহণ করেন রোমিলা থাপার। বর্তমানে সাতাশি বছর বয়সী এই ঐতিহাসিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠিটি পাওয়ার পরেই তিনি তাঁর উত্তর পাঠিয়ে দিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। রোমিলা বলেন, "পৃথিবীর যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই সম্মান প্রাপককে একবার এমিরিটাস স্বীকৃতি দিয়ে দিলে তা আর পুনর্মূল্যায়ন করে না। জেএনইউয়ের চিঠিতে বলাই ছিল যে এই পদটি সম্মানজনক পদ এবং সারা জীবনের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও কিছু চাওয়া হয়নি, কারণ এটা একটা স্বীকৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে একাধিক এমিরেটাস অধ্যাপক রাখতেই পারেন। আমার কাজের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে কমিটি কী পদ্ধতি অনুসরণ করবে তা আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চেয়েছি"।

আরও পড়ুন- ‘কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়াটা উদ্দেশ্য নয়’ বললেন নাগরিক পঞ্জীর নেপথ্য নায়ক

তবে জেএনইউ-এর দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে প্রবীণ ইতিহাসবিদের বক্তব্য, "বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানেই না এমিরেটাস অধ্যাপকের অর্থ কী। আর এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার হবে যদি তাঁরা ভেবে থাকেন যে এমিরেটা সম্মান না দেওয়ার কারণে আমার ঐতিহাসিক পরিচয় এবং অধ্যাপনা ক্ষেত্রের সুনাম প্রভাবিত হবে।" তবে চিঠির পেছনের কারণটি তাঁর কাছে 'বেশ স্পষ্ট' বলে উল্লেখ করেন থাপার। তিনি আরও বলেন, “বর্তমান প্রশাসন জেএনইউতে যে পরিবর্তন এনেছে তা নিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে বলেই হয়তো তাঁকে অসম্মান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি তাঁদের কার্যকলাপ নিয়ে বরাবরই সরব ছিলাম। জেএনইউকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার জন্য আমাদের মধ্যেই কেউ কেউ সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর আমাদের জীবনে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যিই প্রয়োজনও রয়েছে। আমরা ভারতীয়রাও যে এমনটা (সফল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা) করতে পারি সেটারও প্রয়োজন ছিল। আমরা সেখানে সফল হয়েছি"।

আরও পড়ুন- দিনমজুর থেকে জেএনইউয়ের সম্ভাব্য ছাত্র সভাপতি, লড়াই চলছে জিতেন্দ্রর

এখানেই থেমে থাকেননি বিশ্ববরেণ্য এই ইতিহাসবিদ। তিনি আরও বলেন, "এখন স্বাধীন চিন্তাভাবনা এবং প্রশ্ন করার অধিকারে আপত্তি আরোপ করা হচ্ছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা পেশার সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। আমি অবাক হচ্ছি যে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার খেতাব কেড়ে নিয়ে কী লাভ হবে"? যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মত, "৭৫ বছরের উর্দ্ধে যে সব অধ্যাপকেরা আছেন, তাঁরা ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না অথবা তাঁদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে কি না, তা জানার জন্যই এই চিঠি পাঠানো হয়েছিল"। উল্লেখ্য, ৮৭ বছরের রোমিলা থাপারের অর্জন করা আন্তর্জাতিক সম্মানের দীর্ঘ তালিকায় রয়েছে অক্সফোর্ডের সাম্মানিক ডক্টরেট, আমেরিকান ফিলোজফিক্যাল সোসাইটির সদস্যপদ, ‘ইতিহাসের নোবেল’ বলে পরিচিত ক্লুগ পুরস্কারও। অথচ এমন বরেণ্য ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারকে নিজের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কার্যত ‘যোগ্যতা’-র প্রমাণ দেওয়ার প্রসঙ্গ ওঠায় দেশ জুড়ে তুমল বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

Read the full story in English

JNU
Advertisment