Advertisment

জেএনইউকাণ্ড: হোয়াটসঅ্যাপই কি মুখোশ খুলল এবিভিপির?

মুখোশধারীদের হামলা ও নিগ্রহের ঘটনা যে ‘পরিকল্পনামাফিক’ এবং যোগসূত্র রয়েছে এবিভিপির ও জেএনইউয়ের, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে উঠে এল সেই তথ্যই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লাঠি, রড, হাতুরির আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। ভাঙচুর চলেছে মহিলা হস্টেলে। ভেঙেছে প্রথিতযশা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যর ইতিহাস। কেন এমন আক্রমণ? নেপথ্যে কারা? প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। উত্তর, প্রতিউত্তরেই যেন খুলে গেল সেই মুখোশ। মুখোশধারীদের হামলা ও নিগ্রহের ঘটনা যে ‘পরিকল্পনামাফিক’ এবং যোগসূত্র রয়েছে এবিভিপির ও জেএনইউয়ের, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজে উঠে এল সেই তথ্যই। জানা গেল শ'খানেক হামলাকারীদের মধ্যে আটজন এবিভিপির খোদ 'ঘরের লোক'। এছাড়াও রয়েছেন জেএনইউএর প্রধান কর্মাধক্ষ্য, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজের একজন শিক্ষক এবং দু'জন পিএইচডি ছাত্র।

Advertisment

আরও পড়ুন: ‘দেশ বিরোধীদের মেরে ফেলুন’, জেএনইউ হামলার ছক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে?

প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালানোর আগে হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরল এমন কিছু মেসেজ যেখানে লেখা ছিল ‘দেশ বিরোধীদের মেরে ফেলুন’। বাম সমর্থকদের অভিযোগ এ যেন কিছুটা ছক কষেই হামলা। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে এবিভিপির গ্রুপগুলি ও সদস্যদের সম্পর্কে আরও বিশদে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গেল জেএনইউর প্রধান কর্মাধ্যক্ষ ধনঞ্জয় সিংহ এই হামলার আগে ও হামলার সময় এবিভিপির গ্রুপগুলির মধ্যে অন্যতম ‘ফ্রেন্ডস অফ আরএসএস’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। যদিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্রুপটি সম্পর্কে তিনি অবগতই নন। তিনি বলেন, "আমি গ্রুপের অ্যাক্টিভ সদস্য নই। গ্রুপটি ছেড়ে বেরিয়েও যাই। আমার কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরিয়ে আনা। এরা প্রত্যেকেই আমার ছাত্র। আমি নিজে এখানকার পড়ুয়া ছিলাম। অনেক ইমোশন জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। আমরা অনেক গ্রুপে থাকলেও সব সময় মেসেজ দেখার সময় পাই না।" উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে ধনঞ্জয় সিং নিজে এবিভিপির সভাপতির পদপ্রার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন: মিলেছে বিশেষ সূত্র, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে দাবি পুলিশের

অপর একটি গ্রুপ 'ইউনিটি এগেইনস্ট লেফট'-এর সদস্যদের মধ্যে আটজন আরএসএস শাখা এবিভিপির 'অফিসের লোক'। বিজয় কুমার, বিভাগ সন্যোজাকেরা বলেন তাঁদের অজান্তেই তাঁদের গ্রুপের অ্যাডমিন করে দেওয়া হয়েছে। এমনকী গ্রুপ ছেড়ে বেড়িয়ে আসার কারণে এখন তাঁরা 'ইন্টারন্যাশনাল' নম্বর থেকে 'থ্রেটনিং কল'ও পাচ্ছেন বলে দাবি করেন। আরেকটি গ্রুপে পোস্ট করা একটি লেখা 'তোর দো শালো কো'। যিনি লিখেছেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রীতিমতো হুমকি দিয়েই বলেন, " আমি ব্যবসায়ী, আপনার নম্বর এখনি সাইবার সেলের কাছে পাঠাচ্ছি।" এই গ্রুপেরই অ্যাডমিন পদে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ২০১৯-এ জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি পদপ্রার্থী মনীশ জঙ্গিদ, এবিভিপির দিল্লি মহিলা সংসদের সমন্বয়ক ভ্যালেন্টিনা ব্রহ্ম। ভ্যালেন্টিনা বলেন, "আমাকে হঠাৎ করেই গ্রুপে অ্যাড করা হল। আমি সচারচর ম্যাসেজ খুব একটা দেখি না। যখন দেখলাম এবিভিপির অনেকজন আছেন সেই গ্রুপটিতে, তখন ভেবেছিলাম এটা আমাদেরই আরেকটা গ্রুপ। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমি বুঝতে পারি বাম সমর্থকেরা এই গ্রুপে তাঁদের কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে। তখন আমি তাঁদের গ্রুপ থেকে বের করে দেই। হঠাৎ দেখি আমাকেই অ্যাডমিন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন অ্যাডমিনই পারে গ্রুপের অপর অ্যাডমিনকে সরিয়ে দিতে। এটা এখন পরিষ্কার যে কারা ওই গ্রুপ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে।"

অপরদিকে জেএনইউয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পিএইচডির ছাত্র সৌরভ কুমার এবিভিপির গ্রুপগুলিতে পোস্ট করেছেন বহুবার। হামলার আগেই তিনি লিখেছেন, "এসপার নয়তো ওসপার করতেই হবে। আমরা যদি এখন ওদের উপর হামলা না করি, তাহলে আর কবে করব?" যদিও পরবর্তীতে বয়ানে বদল এনে সৌরভ বলেন, "আমার নম্বর অপব্যবহার করে কেউ এসব কাজ করেছে।" এবিভিপির জেএনইউ শাখার সম্পাদক জঙ্গিদ বলেন, "আমাকেও এসব গ্রুপে অ্যাড করা হয়েছে না জানিয়ে। কিন্তু এবিভিপির এমন কোনও গ্রুপ নেই। এটা কমিউনিস্টরাই বানিয়েছে। ইচ্ছে করেই আমাদের অ্যাডমিন করে রেখেছে ওখানে। ওখানে এসএফআই এর সদস্যরাও আছেন।"

এদিকে রবিবারই অপর আরেকটি গ্রুপ 'লেফট টেরর ডাউন ডাউন'-এও দেখা গেছে একই ধরণের মেসেজ। যদিও পরবর্তীতে গ্রুপের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় "সঙ্ঘ গুনস মুর্দাবাদ", সেখান থেকে ফের নাম পালটে রাখা হয় "এবিভিপি ছি ছি"। যিনি এই নাম বদলের সঙ্গে যুক্ত সেই কবীর চুঙ্গাথারা বলেন, তিনি কেরালার ছেলে। একটি লিঙ্কের মাধ্যমে এই গ্রুপে যোগদান করেন। এবিভিপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেই গ্রুপের নাম পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেন।

Read the full story in English

Violence JNU
Advertisment