একদল মুখোশ পরা নারী পুরুষ জেএনইউ ক্যাম্পাসে লাঠি ও রড নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ৩৫ জন ছাত্রশিক্ষককে ঘায়েল করার পর দিন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলালের সঙ্গে কথা বলেন ও জেএনইউয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সন্ত্রাসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার নির্দেশ দেন।
এই ঘটনার জেরে সারা দেশে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা জেএনইউয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাঙ্গামা ও সম্পত্তি ধ্বংসের মামলা দায়ের করেছে। রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও সেলিব্রিটিদের অনেকেই রবিবারই এ ঘটনার নিন্দায় সরব হন। সোমবারও তা চলতে থেকেছে।
মোদী সরকার ছাত্রদের পিছনে গুন্ডা লেলিয়ে দিয়েছে- সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সভানেত্রী
"ভারতের যুব ছাত্রদের কণ্ঠ আজ রোধ করা হচ্ছে। ভারতের যুবকযুবতীদের উপর শাসক মোদী সরকার যে ভাবে গুন্ডা লেলিয়ে দিয়েছে তা মেনে নেওয়া যায়না। পুরো কংগ্রেস দল ভারতে যুব-ছাত্রদের সঙ্গে রয়েছে। গতকাল যেভাবে পরিকল্পিত হামলা হয়েছে, আমরা তার নিন্দা করছি এবং নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।"
"প্রতিদিন সারা দেশের কলেজে ক্যাম্পাসে হানার ঘটনা ঘটছে, হয় পুলিশ না হয় লুম্পেনরা বিজেপি সরকারের মদতে এ ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। ছাত্র-যুবরা শিক্ষা চায়, কাজ চায়, প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন ভবিষ্যৎ চায়, তাদের অধিকার আছে আমাদের সমৃদ্ধ গণতন্ত্রে যোগ দেবার। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে মোদী সরকার এই আকাঙ্ক্ষা দমন করতে চায়।"
এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না- পি চিদাম্বরম, কংগ্রেস নেতা
"আমরা যে ক্রমাগত অরাজকতার দিকে এগিয়ে চলেছি এ ঘটনা বোধহয় তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। দেশের রাজধানীতে ভারতের সর্বোত্তম বিশ্ববিদ্যালেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও পুলিশ কমিশনারের নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটল। সাম্প্রতিক কালে এরকম ঘটনা আর নেই। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না।"
২৬-১১ হামলার কথা মনে করিয়ে দিল- উদ্ধব ঠাকরে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী
"রবিবার রাতে জেএনইউ ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলার ঘটনা আমাকে ২৬-১১-র মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে। জেএনইউতে যা ঘটেছে, মহারাষ্ট্রে আমি সেরকম কিছু ঘটতে দেব না... দেশে ছাত্রছাত্রীরা এখন নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে... যদি দিল্লি পুলিশ হামলাকারীদের খুঁজে না করতে পারে, তাহলে তাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। প্রাথমিক কাজ হল দুষ্কৃতীদের আইনের আওতায় আনা... রাজনীতি পরে হবে।"
উপাচার্যকে বরখাস্ত করা জরুরি- সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই(এম) নেতা
"দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করছে যে উপাচার্য, সেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এই তাণ্ডব নির্বিবাদে ঘটতে দিয়েছে। এই হামলার ষড়যন্ত্রী হিসেবে উপাচার্যকে বরখাস্ত করা উচিত। ক্যাম্পাসে স্বাভাবিকতা ফেরাতে উপাচার্যকে বরখাস্ত করা জরুরি। দেশের রাষ্ট্রপতির উচিত উপাচার্যকে বরখাস্ত করে ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করা।"
হিসেব মেটানো হচ্ছে, দিলীপ ঘোষ, বিজেপি সাংসদ
"ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসা বাম ছাত্রদের অবদান। যেসব জায়গায় বামপন্থীরা ক্ষমতায় কদিন আগে পর্যন্ত ছিল বা এখনও আছে, সেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা বা ত্রিপুরাতেই শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসার ঘটনা ঘটে। এখন বাম ছাত্রদের হিসেব মেটানো হচ্ছে।"
বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক আড্ডা হয়ে উঠতে পারে না- কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল
"আমি আগেও বলেছি এই স্বশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে রাজনৈতিক আড্ডা হয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। এই হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
কংগ্রেস, আপ, বামেরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে- প্রকাশ জাভাড়েকর, পরিবেশমন্ত্রী
"গতকাল রাতে জেএনইউয়ে যে হামলা হয়েছে তার নিন্দা করছি। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি ও বামেদের কিছু অংশ সারা দেশে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হিংসার পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত।"
ছাত্রদের উপর বিজেপির ফ্যাসিস্ট সার্জিক্যাল স্ট্রাইক- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
"সারা দেশে যা চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না... আমিও একসময়ে ছাত্ররাজনীতি করতাম, কিন্তু আমি কোনওদিন ছাত্রদের উপর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হমালা দেখিনি... এটা গণতন্ত্রের উপর পরিকল্পিত আঘাত। কাল ছাত্রসমাজের উপর ফ্যাসিস্ট সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছে।
ভারত গণতান্ত্রিক দেশ, আমাদের বিক্ষোভের অধিকার রয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রে কীভাবে সরকারের বিরুদ্দে প্রতিবাদ করলেই তাকে দেশদ্রোহী বা পাকিস্তানি বলে দাগিয়ে দেওয়া যায়।"