জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার সন্ধেয় তিনঘণ্টা ধরে সশস্ত্র মুখোশধারীদের আক্রমণে আহত হয়েছেন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকশিক্ষিকারা। দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপর লাঠি, লোহার রড, পাথরভাঙা হাতুড়ি নিয়ে চড়াও হয়। শনিবার নতুন সেমেস্টারে রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেদিন থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়ছিল।
গত তিন মাস ধরে জেএনইউ-তে হোস্টেল ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল। জেএনইউ ছাত্র সংগঠন গত শুক্রবার স্থির করে নতুন সেমেস্টারের রেজিস্ট্রেশন পুরো পাঁচদিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে। শীতকালীন সেমেস্টারের জন্য রেজিস্ট্রেশন খোলা ছিল ১ থেকে ৫ জানুয়ারি।
গত নভেম্বর মাসে জেএনইউ ছাত্র সংগঠনের ধর্মঘট থেকে এবিভিপি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের দাবি ছিল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জেএনইউয়ের সমস্যা মেটাতে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করুক। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণও করে বিজেপি।
৪ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেবার জন্য বামপন্থী ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার রুমে গিয়ে কেবল খুলে দেন। এর পর তাঁদের সঙ্গে এবিভিপি সমর্থকদের হাতাহাতি হয়। দুপুর নাগাদ, কয়েকজন এবিভিপি সমর্থক শীতকালীন সেমিস্টারের রেজিস্ট্রেশনের জন্য গেলে তাঁদের উপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ।
রবিবার সন্ধেয় জেএনইউতে একদল মুখোশধারী জনতা হামলা চালায়। তাদের হামলায় ২০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী, দুই শিক্ষকশিক্ষিকা, দুই গার্ড আহত হন। ঘায়েলদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষও। এঁদের এইমস ও সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঝামেলা শুরু হয় সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ। জেএনইউ শিক্ষক সংগঠনের ডাকা শান্তি মিছিল তখন প্রায় শেষ। পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে পৌঁছয় সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ। পুলিশের বক্তব্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর তারা ক্যাম্পাসে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ হামলাকারীরা সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ জন। এরা মূলত বাইরের লোক এবং এবিভিপি সমর্থক বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ অভিযোগ অবশ্য এবিভিপি অস্বীকার করেছে।
এদিনের হিংসার ঘটনার দায় হোস্টেল ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর চাপিয়েছেন উপাচার্য সহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "বেলা সাড়ে চারটে নাগাদ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার বিরোধী এক দল ছাত্র আগ্রাসী ভাবে অ্যাডমিনব্লকের সামনে দিয়ে হোস্টেলে পৌঁছয়। প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে দ্রুত এসে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে বলে। তবে, পুলিশ আসার আগেই রেজিস্ট্রেশন পন্থী ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে একদল আন্দোলনরত ছাত্র... দুর্ভাগ্যজনক যে এক দল ছাত্র হিংসাত্মক উপায়ে প্রতিবাদের মাধ্যমে হাজার হাজার সাধারণ ছাত্রদের পড়াশোনার কাজ করতে দিচ্ছে না।"