Advertisment

জয়েন্টের প্রশ্ন কেন গুজরাটিতে? ক্ষোভে ফুঁসছে বাংলার শিক্ষামহল

শিক্ষকমহলের দাবি, শুধু হিন্দি বা গুজরাটি নয়, অন্য আঞ্চলিক ভাষাকেও পরীক্ষার মাধ্যম করতে হবে। এর প্রতিবাদেই রাস্তায় নামতে চলেছে ছাত্র সংগঠনগুলি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Amit Shah - Narendra Modi

অমিত শাহ - নরেন্দ্র মোদী

জয়েন্ট মেইন পরীক্ষায় এবার থেকে ইংরেজি, হিন্দির সঙ্গে গুজরাটি ভাষাতেও প্রশ্নপত্র তৈরি হবে। কেন্দ্রের এই নয়া নির্দেশিকায় সমালোচনার ঝড় উঠল শিক্ষামহলে। শিক্ষাবিদদের মতে, ধর্মের পর এবার ভাষার ভিত্তিতে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে মোদী সরকার। পাশাপাশি, হিন্দির সঙ্গে গুজরাটি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যায়ভাবে। শিক্ষকমহলের দাবি, শুধু হিন্দি বা গুজরাটি নয়, অন্য আঞ্চলিক ভাষাকেও পরীক্ষার মাধ্যম করতে হবে। এর প্রতিবাদেই রাস্তায় নামতে চলেছে ছাত্র সংগঠনগুলি।

বাংলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। অধ্যাপক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, "এটাতো সাঙ্ঘাতিক দুর্ব্যবহার। সে ক্ষেত্রে হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে কেন গুজরাটি! হিন্দি করলেও আপত্তি আছে। একটা রাজ্যের ভাষা থাকলে সমস্ত রাজ্যেরও ভাষা থাকবে। শুধু বাংলাই বা কেন?" ন্যাশনাল টেষ্টিং এজিন্সির এই বিজ্ঞপ্তির জন্য দেশ ব্যাপী আন্দোলনের আগুন জ্বলা উচিত বলে মনে করেন এই পুরাণবিদ। এটা করা এত সহজ নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি আরও বলেন, একদেশীক সিদ্ধান্ত মেন নেওয়া যায় না। ভারতবর্ষ যে একটা রাষ্ট্র, তাই ভুলে যাচ্ছে (কেন্দ্রীয় সরকার)। গুটরাটই যেন ভারতবর্ষ! এই সিদ্ধান্তে দেশে আগুন জ্বলে যাওয়া উচিত। আসলে দেশে বিরোধীদের ভিতরেও কোনও আগুন নেই। বড় আন্দোলন হওয়া দরকার। এটা করে দেখুক, অত সহজ নয়। শুধু বাংলা নিয়ে ভাবা নয়, সারা দেশ নিয়ে ভাবতে হবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার জয়েন্টে গুজরাটির অন্তর্ভুক্তির নিন্দা করেছেন। এটা অত্যন্ত 'অন্যায়' বলে তিনি মনে করছেন। পবিত্রবাবু বলেন, সংবিধানের অষ্টম তফশিলে যে ২২ টা ভাষা আছে, তার মধ্য়ে গুজরাটিও একটি ভাষা। সাহিত্যগুণে সমৃদ্ধ ভাষা হিসাবে দেখলে গুজরাটির থেকে অনেক এগিয়ে থাকা ভাষাও রয়েছে। মারাঠি, বাংলা, তামিল , মালয়ালাম...এই সমস্ত ভাষারও সম্ভাবনা বা যোগ্যতা আছে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে মাধ্যম হওয়ার। এটা পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্যই এটা আমলাদের করা কাজ।

এবিটিএ -র রাজ্য় সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, "ইংরেজি থাকুক, হিন্দি থাকুক। কেন বাংলা নয়? জয়েন্ট এন্ট্রান্সের অনেক টার্মের ক্ষেত্রে ইংরেজি ও বাংলায় অনেক পার্থক্য হয়ে গিয়েছে। বিশেষত বায়োলজির। ছাত্র-ছাত্রীরা সেই টার্মগুলোর হয়ত ইংরেজি জানে না, কিন্তু বাংলা জানে। সেই সব ছাত্ররা পিছিয়ে পড়বে। এটাকে বাংলার প্রতি অপমান বলেই আমার মনে করি"। তাঁর প্রশ্ন, এই রাজ্যে মাধ্য়মিক পরীক্ষা হয় ৮টি ভাষায়। সেখানে সাঁওতালি, নেপালী, হিন্দি ভাষায় প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধাই হয় এতে। অথচ, সর্বভারতীয় পরীক্ষায় একাধিক ভাষা থাকলে অসুবিধা কোথায়? সামগ্রিকভাবে ধর্মের ভেদাভেদ থেকে ভাষায় ভেদাভেদ করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।

এদিকে, জয়েন্টে গুজরাটি ভাষায় প্রশ্ন কেন, এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে চলেছে এসএফআই। সংগঠনের সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী যে ভাষায় কথা বলেন, সে ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলা যাবে না। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা হবে। বোঝার ওপর শাকের আঁটি, আর হিন্দির ওপর গুজরাটি। এতদিন হিন্দি চাপানো চলছিল, এখন গুজরাটও জুটল।" এদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৮ জানুয়ারি রাজ্য়ে শিক্ষা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এসএফআই।

Joint Entrance Exam Education
Advertisment