ভূমিধস! শ’য়ে শ’য়ে বাড়িতে ফাটল, প্রবল ঠান্ডায় আতঙ্কে দিশেহারা মানুষজন, উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠে ভূমিধস! শনিবার (৭ জানুয়ারি), মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পরবর্তী ৬ মাসের জন্য প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে প্রতি মাসে ৪হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণাও করা হয়। জোশীমঠে ভূমিধসের মাত্র কয়েক মাস আগেই বেশ কয়েকটি ছোট খাট ফাটল লক্ষ্য করেছিলেন বাসিন্দারা। তা উপেক্ষা করাতেই কী বড়সড় বিপর্যয় উঠছে প্রশ্ন।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে ফাটল দেখা দেয় জোশীমঠে। আবারও বিপদের আভাস সংকেত দিচ্ছে প্রকৃতি। আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, রাস্তাঘাট, মাঠে ফাটল দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে যে অবিলম্বে ৯৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাময়িকভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জোশীমঠের সমস্যা নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ধামিকে সম্ভাব্য সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। হিন্দুদের দীর্ঘদিনের তীর্থ জোশীমঠ আর বসবাসের যোগ্য নয়। সেখান থেকে ৬০টি পরিবারকে বের করে আনা হয়েছে। ওই সব পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার কথাও ভেবেছে সরকার। এনিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথাবার্তাও বলেছেন মোদী।
গত ৩রা জানুয়ারি মোহন সিং শাহকে বাড়ির নিচতলার ভাড়াতে ঘুম থেকে তড়িঘড়ি তুলে দেখিয়েছিলেন, বাড়ির দেওয়ালে ফাটল, একদিনে অনেকটাই হেলে পড়েছে বাড়িটি। পাশের ঘরে থাকা ভাড়াটিয়ার অভিজ্ঞতা অনেকটা একই রকম, দুই পরিবারই এলাকা ছেড়ে দেরাদুন, ঋষিকেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে অবিলম্বে বাড়ি ছেড়ে পাশের এক লজে গিয়ে উঠতে, প্রায় ৫০ বছর এই বাড়িতেই বাস করছেন তিনি। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রাতের ঘুম উড়েছে পরিবারের।
সঞ্জয়, স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে পাশেই থাকেন। ১৯৮৯ সালে সঞ্জয়ের বাবা বাড়িটি নতুন করে তৈরি করিয়েছেন। সঞ্জয় জানিয়েছেন, প্রায় এক মাস আগে আমরা ঘরের দেওয়ালে ছোটখাটো ফাটল লক্ষ্য করেছিলাম, বুঝতে পারিনি সেটা উপেক্ষা করাতেই এত বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। এখন পরিবার নিয়ে কী করবেন আদৈও নিজের বাড়িতে আর কখনও ফিরতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নও বিশ বাঁও জলে।
যোশীমঠ এলাকায় ধস কোনও নতুন ঘটনা নয়। অতীতেও ধসের কারণে এখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিন্তু, এবারের প্রধান সমস্যা হল- এই শহর কার্যত বসে গিয়েছে। এখন গোটা শহরটা রয়েছে একটা আলগা মাটির ওপর। এই মাটি আবার ভূমিকম্পের ফলে তৈরি হওয়া ভূমিধসের কারণে জমা হয়েছে।
জাতীয় এবং উত্তরাখণ্ড বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অন্তত চারটি দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানরাই জোশীমঠ এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (এনডিএমএ) সদস্যরা সোমবার উত্তরাখণ্ডে যাবেন। তাঁরা গোটা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করবেন।
এনডিএমএ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, আইআইটি রুরকি, ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির বিশেষজ্ঞদের দল থাকবে যোশীমঠে। পাশাপাশি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজি এবং সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটও জোশীমঠের পরিস্থিতি বুঝে তা মোকাবিলার সুপারিশ করবে। রবিবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পর্যালোচনায় উত্তরাখণ্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তারা ছাড়াও জোশীমঠের জেলা আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি শনিবারই জোশীমঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার জন্য তিনি গিয়েছিলেন জোশীমঠে। একদিন পরে তিনি প্রায় ৬০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ধামী বলেন, ‘জোশীমঠ সংস্কৃতি, ধর্ম ও পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যোশীমঠ বদ্রীনাথ, হেমকুন্ড সাহেবের মত বিখ্যাত তীর্থস্থান এবং আন্তর্জাতিক স্কিইংয়ের জন্য বিখ্যাত আউলির প্রবেশদ্বার। একে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।