মহিলা সাংবাদিককে গ্রেফতারে প্রশ্নের মুখে পাঞ্জাব সরকার। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লুধিয়ানা থেকে গ্রেফতার করা হয় কেজরিওয়ালের অনুষ্ঠান কভার করতে যাওয়া এক মহিলা সাংবাদিককে। পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ ওঠে। টিভি সাংবাদিক ভাবনা কিশোরকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘন্টা পরে, পাঞ্জাবের গভর্নর বনোয়ারিলাল পুরোহিত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানকে ফোন করে সাংবাদিকের গ্রেফতারি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মহিলা সাংবাদিককে গ্রেফতারি এবং পুলিশি তৎপরতা নিয়ে সরব হয়েছেন ‘ইন্ডিয়ান উইমেন্স প্রেস কর্পস’ (আইডব্লুপিসি), ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস (ইন্ডিয়া) এবং ‘প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া’ও। পাশাপাশি এডিটর গিল্ডের তরফে পুলিশের অতিসক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক বিবৃতিও জারি করা হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে ‘‘যা হয়েছে তা অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে”। শনিবার রাতে অবশ্য ওই সাংবাদিককে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট।
পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় আম আদমি পার্টি সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান-এর অনুষ্ঠান কভার করতে যাওয়া এক মহিলা সাংবাদিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জানা গিয়েছে মহিলা ওই সাংবাদিকের নাম ভাবনা কিশোর এবং তিনি লুধিয়ানার মহল্লা ক্লিনিকের উদ্বোধন সংক্রান্ত অনুষ্ঠান কভার করতে যাচ্ছিলেন। মহিলা সাংবাদিকের সহযোগী মৃত্যুঞ্জয় কুমার এবং গাড়ির চালক পারমিন্দর সিং-এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় শনিবার তাদের গাড়ি একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। লুধিয়ানা পুলিশের তরফেএক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গগন নামে এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে মহিলা সাংবাদিক যে মিডিয়া চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত সেই চ্যানেল প্রকাশ্যে আনে কীভাবে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল নয়াদিল্লিতে তার বাসভবনের অন্দরসজ্জায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন। মহিলা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ ঘিরে প্রশ্নের মুখে পাঞ্জাবের আপ সরকার। বিজেপির তরফে সাংবাদিকের গ্রেফতারিকে ‘প্রতিশোধমূলক আচরণ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
পুলিশের এফআইআর-এ বলা হয়েছে লুধিয়ানার বছর-৫০এর মহিলা গগনের অভিযোগের ভিত্তিতে মহিলা সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান-এর মহল্লা ক্লিনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় ওই মহিলা সাংবাদিকের গাড়ি বেপরোয়াভাবে তাকে পাশ থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তার ডান হাতে চোট লাগে এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ভেঙে যায়। এরপর বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। অভিযোগ তিনজনই তাকে গালিগালাজ করতে থাকেন।
এদিকে, জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা পাঞ্জাব পুলিশের ডিজিপিকে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টিতে রহস্তক্ষেপ করতে এবং বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এফআইআরের কপি এবং এ মামলায় এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপ সংক্রান্ত রিপোর্ট ৪ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি উমাকান্ত লাখেরা, সাধারণ সম্পাদক বিনয় কুমার এবং চণ্ডীগড় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৌরভ দুগ্গাল দাবি করেছেন যে মহিলা সাংবাদিক ভাবনা কিশোরকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করে, তখন তিনি মহল্লা ক্লিনিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কভার করতে যাচ্ছিলেন। তাকে গ্রেফতার করেছে এক পুরুষ পুলিশ আধিকারিক।
গ্রেফতারের সমন কোন মহিলা পুলিশ কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলেও জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, কয়েক ঘণ্টা ধরে ভাবনা কিশোরের পরিবারকে গ্রেফতারের কথা জানানোও হয়নি। সন্ধ্যায় পুলিশের জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, মহিলা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে SC/ST আইনে মামলা দায়ের করার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এই পদক্ষেপকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করে চণ্ডীগড় প্রেস ক্লাব ভাবনা কিশোরের ওপর পুলিশি জুলুমের যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।