প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার মামলায় নয়া মোড় এসেছে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পরামর্শের পর। ২ মে, তদন্তকারী প্যানেলকে লেখা এক চিঠিতে চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন অভিযোগকারিণীর অনুপস্থিতিতে ঘটনার তদন্ত করলে তা শীর্ষ আদালতের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করবে। তিনি আরও বলেন তদন্ত কমিটি বরং অভিযোগকারিণীকে একজন আইনজীবী অথবা পরামর্শদাতা নিয়োগে সাহায্য করতে পারে। গগৈয়ের বিরুদ্ধে মামলায় 'ফুল কোর্ট' আলোচনার দাবি জানান বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের চিঠির কথা প্রথম প্রকাশ করেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসই। রবিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত বিচারকদের কাছে 'ফুল কোর্ট' (সাধারণত আদালতে যতজন বিচারপতি তদন্ত করেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে তার চেয়ে বেশি বিচারপতিকে নিয়ে তদন্ত করাকেই আইনি ভাষায় ফুল কোর্ট বলা হয়)। আলোচনার কোনও খবর ছিল না। সূত্রের খবর অনুযায়ী বিচারপতি বোবদে, ইন্দু মালহোত্রা এবং বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জির বেঞ্চের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে দেখা করেন বিচারপতি নারিম্যান এবং চন্দ্রচূড়।
তদন্তকারী প্যানেলকে লেখা চিঠিতে বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও পরামর্শ দিয়েছিলেন রুমা পাল, সুজাতা মনোহর এবং রঞ্জনা দেশাই, এই তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিমকোর্ট বিচারপতিদের মধ্যে যে কোনও একজনকে প্যানেলের অংশ করা হোক।
আরও পড়ুন, সিনিয়রিটি খোয়ানোর পর কাশ্মীর ছাড়তে হচ্ছে মেজর লিতুল গগৈকে
সূত্রের খবর, বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের চিঠির বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত মত নয়, শীর্ষ আদালতের অনেকের মধ্যেই গগৈ মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ১৭ জন বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে তবেই ওই চিঠি লেখা হয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ছাড়া আরও ২২ জন বিচারপতি রয়েছেন। তিনজন বিচারপতি বর্তমানে প্যানেল সদস্য। বিচারপতি রামানা সম্প্রতি প্যানেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
অভিযোগকারিণী ইতিমধ্যে জানিয়েছিলেন তিনি তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। তারপর তদন্ত কমিটি ওই মহিলার অনুপস্থিতিতেই তদন্ত চালিয়ে গিয়েছে।
এটি আর পাঁচটি যৌন হেনস্থার অভিযোগ নয়, যেহেতু অভিযোগ স্বয়ং মুখ্য বিচারপতির বিরুদ্ধে, তাই শীর্ষ আদালত থেকে অভিযোগকারিণী মহিলাকে তাঁর পক্ষে সওয়াল করার জন্য আইনজীবী দিতে অস্বীকার করে শীর্ষ আদালত। এবং সেই কারণেই মহিলা তদন্ত ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন, এই ছিল মহিলার অভিযোগ।
আরও পড়ুন, ‘ইউপিএ জমানাতেও ১ লক্ষ কোটির বরাত পেয়েছি’, বিস্ফোরক অনিল আম্বানি
মুখ্য বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনার পর যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়, বিচারপতি এনভি রামানা সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। কারণ হিসেবে রামানা বলেন মুখ্য বিচারপতি রঞ্জন গগৈ তাঁর পরিবারের মতো। রামানার জায়গায় তদন্ত কমিটিতে আসেন বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা। তদন্ত ঘোষণা করা হলে অভিযোগকারিণী ফের অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটিতে মহিলা সদস্য না থাকায় কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থা হলে যে বিশাখা নির্দেশিকা মেনে চলা হয়, তা হয়নি।
নিজেকে তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে নিলে প্যানেল সদস্যরা অভিযোগকারিণীকে জানিয়ে দেয়, এবার একতরফা তদন্ত ছাড়া গতি নেই সুপ্রিম কোর্টের। এক মহিলা অভিযোগকারিণীর অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁকে আইনজীবী কেন দেওয়া হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তাঁর মতে এই ঘটনা মহিলার সম্মানহানি করেছে, এবং আদালতের প্রক্রিয়া পক্ষপাতমুক্ত নয়।
Read the full story in English