২০১৯ -এর লোকসভা ভোটে বাংলায় অভূতপূর্ব সাফল্য পেল বিজেপি। শাসক দল তৃণমূলের চেয়ে মাত্র ৪ টি আসন কম পেয়েছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে ২টি আসন থেকে বেড়ে ১৮ ছুঁয়েছে বঙ্গে বিজেপির আসন সংখ্যা। দলের এই বিপুল সাফল্যের জন্য সাধারণ সভাপতি কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছে দলের একটা বড় অংশ। রাজ্যে বিজেপির পরিকল্পনা নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা হল কৈলাস বিজয়বর্গীয়র।
বিজেপি-র অভূতপূর্ব সাফল্যের পর রাজ্যে দলের পরিকল্পনা কী?
এটা বিজেপির জন্য নিঃসন্দেহে খুব বড় জয়। প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে, যে সমস্ত কেন্দ্রে আমরা জয়ী হয়েছি, সেখানে সংগঠন কীভাবে আরও মজবুত করতে হবে। মানুষ যাতে আমাদের ওপর আস্থা রাখে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। রাজ্যবাসী তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। সেটা ধরে রাখতে হবে আমাদের। সাংসদদের সঙ্গে বসে আমাদের আলোচনা করতে হবে। সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে আমাদের।
আপনারা এইরকম সাফল্য প্রত্যাশা করেছিলেন?
নির্বাচন কমিশন আমাদের খুব সাহায্য করেছে। কিন্তু কমিশন যদি ১০০০০ সমাজ বিরোধীকে চিহ্নিত করে দিত, খুব ভালো হত। কারণ এই সমাজ বিরোধীরাই ভয়, আতঙ্কের আবহ তৈরি করে রাখে। মানুষ বেরিয়ে এসে ভোট দিতে ভয় পায়। রাজ্যে ভোটের পরিবেশ ঠিক থাকলে বিজেপি অন্তত ৩০টি আসন পেত।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভালো ফলাফলের পর সাফল্য ধরে রাখার জন্য কী কী করতে হয়েছিল বিজেপিকে?
অমিত শাহের দূরদর্শিতার জন্য ২০১৪-এর লোকসভার নির্বাচনের পর থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। চার বছর আগে থেকে শাহ বাংলার ওপর জোর দেওয়া শুরু করেছিলেন। ওনার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে আমি নিজে বারবার বাংলায় গিয়েছি। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদীর বার্তা আমাদের মানুষের কাছে পৌঁছতে ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে।
আরও পড়ুন, বিকাশ বাদে জামানত বাজেয়াপ্ত সেলিম-সহ সব বাম প্রার্থীর
মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিল, নাকি বিজেপিকেই?
পজিটিভ, নেগেটিভ দুধরনের ভোটই পেয়েছি আমরা। যারা উন্নয়ন চায়, শিল্প চায়, কর্মসংস্থান চায়, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা চায়, সবাই আমাদের ভোট দিয়েছে। রাজ্যে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে, তাই অনেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। তৃণমূলের শাসনে মানুষের দম আটকে আসতে শুরু করেছিল।
অনেকেই বলছেন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কারণে বাংলায় জিতে যেতে পারে বিজেপি। কী বলবেন?
আমরা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করিনি। মমতা সরকারের তোষামোদের রাজনীতির কারণে হিন্দুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা এসেছে। রাজ্যে রামনবমী নিষিদ্ধ করে মদ্রাসা আর মৌলবিদের অর্থ সাহায্য করছেন মমতা। হিন্দুদের মনে তাই রাগ তৈরি হয়েছে।
বিজেপি নাগরিকত্ব বিল এবং এনআরসি নিয়ে খুব সরব। আপনারা কি বাংলাতেও এসবের ওপর জোর দেবেন?
১০০ শতাংশ। নাগরিকত্ব বিল সংসদে পাশ হবে খুব শিগগির। এনআরসি-র জন্য বিজেপিকে বাংলায় ক্ষমতায় আসতে হবে। এখানে এনআরসি হওয়া খুব দরকার। ২ কোটি অভিবাসী রয়েছে এখানে।
আরও পড়ুন, তৃণমূলে বড়সড় রদবদলের সম্ভাবনা, বৈঠক বিকেল ৪টেয়
নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ৪০জন তৃণমূল বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বিজেপির অন্যান্য নেতারা বলছেন সংখ্যাটা ১০০-র কাছাকাছি। এটা কি মমতার সরকারের পক্ষে খুব বিপদ ডেকে আনছে?
বিজেপি তো রাজ্য সরকারকে হুমকি দিচ্ছে না। মমতার একনায়কতন্ত্রই বিপদ ডেকে আনছে। দলের অভিজ্ঞ নেতাদের কথা না শুনে নিজের ভাইপোকে তুলে ধরতে চাইছেন মমতা। দলের ভেতরেই এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাই অনেকেই দল ছাড়তে চাইছে। বিজেপি এসে পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে ভাঙবে না। সরকার নিজেই পড়ে যাবে। গুণ্ডারা দলের মুখ হয়ে উঠবে, আর সত্যিকারের রাজনীতিবিদরা পেছনের সারিতে চলে যাবেন, বেশিদিন তা চলবে না। এখানকার রাজনৈতিক বাতাবরণ খুব গরম হয়ে রয়েছে। তৃণমূলের ভেতরে যা খুশি হতে পারে।
কিছু বিজেপি নেতা বলছেন মমতাকে হারাতে সিপিএম বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।
সেরকম ব্যাপার নয়। তৃণমূল স্তরে রাজ্যসরকারকে নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জারাই মনে করেছে বিজেপি মানুষকে বাচাতে পারবে, তাঁরাই আমাদের ভোট দিয়েছে। সিপিএম ক্যাডারের কিছু ভোট তো নিসচই পেয়েছি আমরা। কিন্তু তৃণমূলের ভোট খুব কমেনি। অর্থাৎ সিপিএম থেকে কিছু ভোট ওদিকেও গিয়েছে।
বঙ্গে বিজেপির নেতৃত্বে কে থাকবেন? মুকুল রায়?
সেটা বিজেপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেই। মুকুল রায় বাংলার খুব গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এখানে বিজেপির ভালো ফলাফলের পেছনে মুকুলের বড় ভুমিকা রয়েছে, আগামী দিনেও থাকবে।
Read the full interview in English