গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে ধৃত দুই ব্যক্তিতে কন্নড় ভাষার লেখক কালবুর্গী হত্যা মামলায় নিজেদের হেফাজতে নিল কর্নাটক পুলিশের সিআইডি। গত ২০১৫ সালের ৩০ অগাস্ট কর্নাটকের ধারওয়াড়ে নিজের বাড়িতে খুন হম এম এম কালবুর্গী।
যে দুজনকে কর্নাটক পুলিশের সিআইডি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে, তারা হল, গণেশ মিশকিন (২৭) ও অমিত বাড্ডি (২৮)। ৭৭ বছরের কালবুর্গী হত্যা মামলায় এই দুজনই প্রথম অভিযুক্ত।
সিআইডি-র অতিরিক্ত ডিজি কে এস আর চরণ রেড্ডি জানিয়েছেন দুজনকেই ধারওয়াড় আদালতে তোলা হয়। সেখান থেকে তাদের দুজনকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেড্ডি বলেছেন, ‘‘কালবুর্গী হত্যা মামলায় এরাই প্রথম অভিযুক্ত। এদের দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও, যেহেতু গৌরী লঙ্কেশ হত্যা মামলায় এরা ইতিমধ্যেই জেল হাজতে রয়েছে ফলে আনুষ্ঠানিক গ্রেফতারি আর দেখানো হয়নি।’’
আরও পড়ুন, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ড: একই ব্যক্তি বন্দুক চালাতে শিখিয়েছিল নরেন্দ্র দাভোলকরের খুনিদেরও
গৌরী লঙ্কেশ হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়নি, এমন ব্যক্তিদের কালবুর্গী হত্যায় জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সিআইডি আধিকারিকরা।
মিশকিন এবং বাড্ডি, এই দুজনেই ধারওয়াড় সংলগ্ন হুবলি শহরের বাসিন্দা। গৌরী লঙ্কেশ হত্যা মামলায় বিশেষ তদন্ত দল যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল গৌরী হত্যায় ধৃতদের কেউ কেউ কালবুর্গী হত্যা মামলায় জড়িত থাকতে পারে। এরপরই সিআইডি দাবি করে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে এই দুজন কালবুর্গী হত্যার ঘটনায় যুক্ত।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গৌরী লঙ্কেশ হত্যার দিন অভিযুক্ত শুটার পরশুরাম ওয়াগমারেকে তাঁর বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়েছিল এই গণেশ মিসকিন, এমনটাই অভিযোগ। গণেশ হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শ্রীরাম সেনার সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে অমিত বাড্ডির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকারীদের পালানোর ব্যাপারে সে সমস্তরকম সহযোগিতা করেছিল। অমিত হুবলি এলাকায় গণেশ মিসকিনের সঙ্গে একযোগে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হিংসাত্মক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষ তদন্তদলের বক্তব্য অনুসারে সনাতন সংস্থার অধীন উগ্রপন্থী গোষ্ঠী হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির সঙ্গে যুক্ত গোপন গোষ্ঠীতে নিযুক্ত হওয়ার পর অমিত ও গণেশ আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেয়। কালবুর্গীর কার্যবিধির উপর তারা নজরদারি চালাত বলে অভিযোগ। এই নজরদারি গৌরী লঙ্কেশের ওপরেও তারা চালাত বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষ তদন্তদল জানতে পেরেছে, অমিত বাড্ডি, গণেশ মিশকিন ছাড়াও কালবুর্গী হত্যার ছকের কথা জানত আরও দুজন। সে দুজনেই গৌর লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে। তাদের একজন হল অমোল কালে, হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির পুনের প্রাক্তন আহ্বায়ক এবং গোপন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী কর্নাটক অপারেশনস-এর মূল চাঁই। অন্যজন হল, এই গোষ্ঠীর অস্ত্র প্রশিক্ষক রাজেশ বাঙ্গেরা।
আরও পড়ুন, গৌরী লঙ্কেশসহ চার বুদ্ধিজীবীর হত্যা: গোলোকধাঁধার মধ্যে কী রয়েছে?
গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তরা যে কালবুর্গী হত্যাকাণ্ডেও যুক্ত, বিশেষ তদন্তদলের এই রিপোর্ট পাওয়ার পর সিআইডি গত মাসে বেঙ্গালুরুর এক আদালত থেকে ধৃত সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি আদায় করে। এই সাতজন হল, সুজিত কুমার, অমোল কালে, অমিত ডেগওয়েকার, মনোহর এডাভে, গণেশ মিশকিন, অমিত বাড্ডি এবং রাজেশ বাঙ্গেরা।
সিআইডি-র আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কালবুর্গী হত্যাকাণ্ডের পর তিন বছর কেটে গেলেও, ঘটনার পরেই যে সব প্রমাণাদি সংগ্রহ করা হয়েছিল সে সব তথ্য ডিজিটাল এবং ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংগৃহীত রয়েছে, যা এই তদন্তে সহায়ক হবে।