আজকের পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন মিরাট অঞ্চলের নন-ভেজ রেস্তোরাঁর মালিকরা। কেননা আজই শেষ হচ্ছে কানওয়ার যাত্রা। উত্তর ভারতে ১৩ দিনের এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে কার্যত ব্যবসা লাটে উঠেছিল ওই রেস্তোরাঁগুলোর, এমনই দাবি মালিকদের। কানওয়ার যাত্রা চলাকালীন কোনও আমিষ খাবার বিক্রি করা যাবে না, প্রশাসনের এহেন নির্দেশে রাতারাতি ওই রেস্তোরাঁগুলোর পাত থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল মাটন হালিম কিংবা মাটন বিরিয়ানির মতো আমিষ পদ। পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছিল ভেজ বিরিয়ানি বা ভেজ হালিম। এহেন স্বাদ বদলের জেরে মিরাটের ঘন্টাঘর এলাকার নন-ভেজ রেস্তোরাঁগুলোর সামনে সেই চেনা ভিড় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন ওই রেস্তোরাঁর মালিকরা।
কানওয়ার যাত্রা কী? প্রতিবছর শিবরাত্রী উপলক্ষে গঙ্গার জল নিয়ে শিবের মাথায় ঢালার জন্য পূণ্যার্থীরা এই যাত্রা করে থাকেন। উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী, গোমুখ, হরিদ্বার, বিহারের সুলতানগঞ্জের মতো ধর্মীয় স্থানে এই যাত্রা উদযাপন করা হয়। এছাড়াও মিরাট, দেওঘর, কাশী বিশ্বনাথের মতো ধর্মীয় স্থানেও ভক্তরা এই যাত্রা করেন।
#KanwariaMenace continues. It's the Bulandshahr Police @Uppolice that is beaten up by them. The police had to run away to save their lives. Just yesterday , petals were being showered on them in the same state, by the same police???? pic.twitter.com/QngwYuv0iz
— Kirandeep (@raydeep) 9 August 2018
গত কয়েক বছর ধরে কানওয়ার যাত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে আইন এবং শান্তি ভঙ্গের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কার্যত গুন্ডাগিরি করে বেড়ান এঁরা, এমনটাই বক্তব্য দিল্লি এবং রাজধানীর কাছাকাছি অঞ্চলের মানুষের।
রেস্তোরাঁর নাম 'এ আর দস্তরখান'। কানওয়ার যাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে যে রেস্তোরাঁর ব্যানারে বিজ্ঞাপিত হচ্ছে ভেজ বিরিয়ানি, ভেজ হালিমের মতো নিরামিষ পদ। কিন্তু লোকসানের মুখে ওই রেস্তোরাঁর মালিক আব্দুল রহমান। তিনি বললেন, "কানওয়ার যাত্রা উপলক্ষে সমস্ত নন-ভেজ রেস্তোরাঁকে ১৩ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। গত বছর শুধুমাত্র শিবরাত্রির দিন বন্ধ রাখতে বলেছিল। তাই এবার আমরা আমাদের রেস্তোরাঁ খোলা রাখার জন্য আমিষ খাবার পরিবেশন বন্ধ করি।"
লোকসান থেকে বাঁচতে আমিষ পদ বিক্রি করে রেস্তোরাঁ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আব্দুল রহমান। কিন্তু দিনের শেষে হিসেব বলছে, আমিষ পদ বন্ধ করায় দিনে ১৫ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, "আমিষ পদ খেতে আমাদের রেস্তোরাঁয় যাঁরা নিয়মিত আসেন, আমিষ বন্ধ করায় তাঁরা আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।"
আরও পড়ুন, যৌন হেনস্থা রুখতে হোমে নজর কেন্দ্রের, সোশ্যাল অডিটের নির্দেশ
এদিকে নন-ভেজ রেস্তোরাঁয় আমিষ খাবার বিক্রিতে তেমন কোনও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন মিরাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার রণবিজয় সিং। প্রশাসনের তরফে এমন কোনও নির্দেশিকাও জারি করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটা ওঁরা নিজেদের মতো করে করেছেন। এটা একটা রীতি, এসময় ওঁরা নিজেরাই রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখেন। গত ৩-৪ দিন রেস্তোরাঁয় মাংস বিক্রি বন্ধ ছিল।"
ভেজ হালিম ও ভেজ বিরিয়ানি খেতে খেতে কামার আলি নামের এক ব্যক্তি বললেন, "কেন মদের দোকান বন্ধ করা হল না? হাইওয়েতে সব মদের দোকান খোলা। এটা কি ঠিক? আর মাংস খাওয়া ঠিক না? এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না।"
কানওয়ার যাত্রা উপলক্ষে নিরামিষ পদ বিক্রি করে লোকসানের মুখে আরেক রেস্তোরাঁ আল-করিম। মালিক মহম্মদ আসিফ জানালেন, "আমাদের দিনে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। আগে আমাদের দিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা রোজগার হত। এখন সেটা দিনে ১০ হাজার টাকা হচ্ছে।"
লাজিজ নামে আরেকটি রেস্তোরাঁ অবশ্য নিরামিষ পদ বিক্রির পথে না হেঁটে ১৩ দিন ঝাঁপ বন্ধ অবস্থাতেই ছিল। রেস্তোরাঁর মালিক মুশির আলম বললেন, "পরের বছর থেকে আমরাও নিরামিষ পদ বিক্রি করব, যাতে এত লোকসান না হয়। এবার দিনে ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতি হয়েছে। গত ১৩ দিনে আমাদের কর্মীদের টাকা দিতে পারিনি।"
সুমিত কুমার নামে বছর বাইশের এক কানওয়ার যাত্রী অবশ্য বললেন, "যদি রেস্তোরাঁতে মাংস বিক্রি করা হত, তা আমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করত।" মুসলিম রেস্তোরাঁগুলোর নিরামিষ পদ বিক্রির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ভিএইচপি-র মিরাট বিভাগ মন্ত্রী গোপাল শর্মা।
এদিকে পুলিশ জোর করে রেস্তোরাঁ ও মাংসের দোকান বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ মিরাট শহরের নৌচণ্ডী এলাকার ৭৩নং ওয়ার্ডের কর্পোরেটর আব্দুল গফরের। মিরাটের আরেক কর্পোরেটরও এমন দাবি করেছেন।