সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যতম নিদর্শন বেল্লুরের ঐতিহাসিক চেন্নাকেশব মন্দির। ডানপন্থীদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও মন্দির কমিটি পবিত্র কোরান পাঠের পরে 'রথোৎসব' আয়োজনের যুগ-প্রচলিত ঐতিহ্যের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। দুদিনের এই উৎসব ঘিরে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই ঐতিহাসিক চেন্নাকেশব মন্দিরে। এই নিয়ে মন্দির কমিটির এক সিনিয়ার কর্মকর্তা বলেন, “দীর্ঘকাল ধরেই উৎসব উপলক্ষে এটাই আমাদের মন্দিরের রীতি। সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। এই বছর, মন্দির কর্তৃপক্ষ মুসলিম ব্যবসায়ীদের স্টল দেওয়া নিয়ে এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাই নিয়ে কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এই নিয়ে রাজ্যে প্রশাসন মন্দিরের পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলে মন্দিরের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারাকে বজায় রাখার কথা ঘোষণা করেছে”।
ঐতিহ্য অনুসারে একজন মৌলবি চেন্নাকেশব মন্দিরে উদযাপনের সূচনা উপলক্ষে কোরানের পবিত্র অংশ পাঠ করেন তার পরই শুরু হয় উৎসবের। সম্প্রতি, কর্ণাটকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদ চড়তেই ডানপন্থী সংগঠন, জেলা প্রশাসন এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ মুসলিম ব্যবসায়ীদের উৎসবে অংশ না নেওয়ার অনুরোধ করেছিল।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে মন্দির কমিটিকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে “কোনও অ-হিন্দু ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে যেন কোনরকম বাঁধা দেওয়া না হয়। সেই সঙ্গে তাদের স্টল স্থাপন এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা এপ্রসঙ্গে বলেন “এর আগে, মন্দির কমিটি মুসলিম দোকানদারদের উৎসবে সামিল না হওয়ার একটি নোটিশ জারি করেছিল এবং তাদের দোকান বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিল। সরকার তাদের উৎসবে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে এবং অহিন্দুদের স্টল স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার জন্য মন্দির কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণার পর কমপক্ষে ১৫ জন মুসলিম ব্যবসায়ী মন্দির চত্ত্বরে তাদের স্টল দিয়েছেন”।
চেন্নাকেশব মন্দিরের 'রথোৎসব'-এ অংশ নেওয়া হাজার হাজার ভক্ত এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। হাজার হাজার হিন্দু ভক্তের উপস্থিতিতে ভগবান চেন্নাকেশবের রথের সামনে পবিত্র কোরান পাঠ করেন কাজী সৈয়দ সাজেদ পাশা। অনুষ্ঠানটি অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রসঙ্গে পাশা বলেন, বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির হিসাবে এই ঐতিহ্য পালন করা হয়। পার্থক্য যাই হোক না কেন, হিন্দু এবং মুসলমানদের বিভেদ ভুলে একসঙ্গে বসবাস করা উচিৎ”।