গত বছর যখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন কর্ণাটক সরকার শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছিল। সেই সময় এক বেসরকারি প্রি ইউনিভার্সিটি কলেজে (PUC) পড়ত ১৮ বছরের ছাত্রী তাবাসসুম শেখ। সে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত হল- ধর্মীয় বিশ্বাসকে মানলেও শিক্ষাকে তার অগ্রাধিকার দিতে হবে। বেঙ্গালুরুর নাগারথনামা মেদা কস্তুরিরাঙ্গা সেট্টি রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় (NMKRV) কলেজ ফর উইমেনের ছাত্রী তাবাসসুম পরিষ্কার বলেন, 'আমি কলেজে হিজাব না-পরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর, আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাব। আমাদের শিক্ষার জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।'
তাঁর সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, এক বছর পরে সেটা সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেল। শুক্রবার, তাবাসসুম কর্ণাটক প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত PUC-II পরীক্ষায় (অন্য রাজ্যে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার সমতুল্য) প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি এই বছর কর্ণাটক রাজ্য কলা বিভাগে ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯৩ পেয়েছেন। হিন্দি, মনোবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানে ১০০-য় ১০০ পেয়েছেন। কর্ণাটক তখন PUC-তে হিজাবে নিষেধাজ্ঞা ঘিরে উত্তাল। চারদিকে হিজাব ইস্যুতে বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। সেই সময় তাবাসসুমও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। কারণ, তিনি সর্বদা ক্লাসে হিজাব পরে যাতায়াত করতেন।
উদুপিতে এক সরকারি PUC কলেজের ছয় জন ছাত্রী গত বছরের গোড়ার দিকে হিজাব নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। এই বিক্ষোভ অন্যান্য জেলাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। যার জেরে কর্ণাটকের বিজেপি সরকার একটি নির্দেশ জারি করে। তাতে বলা হয়, পড়ুয়াদের পিইউসি (ক্লাস ১১, ১২) ও স্নাতকস্তরে কলেজগুলোয় নির্ধারিত ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে। আর, সরকারি ও বেসরকারি কলেজে হিজাব ইউনিফর্মের অংশ নয়।
আরও পড়ুন- মাইলফলক ছুঁয়ে ইতিহাস গড়ল ইসরো, সিঙ্গাপুরের দুটি উপগ্রহ সফলভাবে কক্ষপথে স্থাপন
সেসব দিনের কথা আজও ভুলতে পারেননি তাবাসসুম। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বললেন, 'এই নির্দেশ আমাকে উদ্বেগে ফেলে দিয়েছিল। আমার কিছু বন্ধু, হিজাব পরে ক্লাস করা যায়, এমন কলেজে চলে গিয়েছিল। আবার, সরকার নির্দেশ দেওয়ার পরও কিছু ছাত্রী হিবাজ পরেই কলেজে আসা চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শিক্ষা এবং হিজাবের মধ্যে আমি শিক্ষাকে বেছে নিয়েছি। বড় কিছু অর্জনের জন্য আমাদের কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়।'